প্রথম সপ্তাহের গর্ভাবস্থা : প্রাথমিক লক্ষণ ও হিসাবের কৌশল
গর্ভাবস্থার ১ম সপ্তাহটি এমন একটি সময় যা প্রায়শই বুঝতে বা অনুভব করতে কষ্ট হতে পারে, কারণ বেশিরভাগ মহিলারা তখনও জানেন না যে তারা গর্ভবতী। প্রেগন্যান্সির প্রথম সপ্তাহে সাধারণত কোনো বিশেষ শারীরিক লক্ষণ থাকে না।
প্রথম
সপ্তাহটি আসলে শেষ মাসিক চক্রের শুরুর দিন হিসাবে গণনা করা হয়। এই সময়ে ডিম্বাণু
ও শুক্রাণু একসাথে মিলিত হয় না। সাধারণত, ডিম্বাণু
নিষিক্ত হওয়ার পর প্রায় ২ সপ্তাহ পরে প্রেগন্যান্সির লক্ষণগুলো স্পষ্ট হয়ে ওঠে।
কিভাবে গর্ভাবস্থার হিসাব করা হয়:
গর্ভাবস্থার সময়কাল সাধারণত ৪০ সপ্তাহ বা ৯ মাস ধরে হিসাব করা হয়, যা গণণা করা হয় নারীদের শেষ মাসিকের প্রথম দিন থেকে শুরু করে। গর্ভাবস্থার হিসাব সাধারণত নিম্নোক্ত পদ্ধতিতে করা হয়:
১. শেষ মাসিকের প্রথম দিন (Last Menstrual Period - LMP) থেকে:
গর্ভধারণের সঠিক সময়টি নির্ধারণ করা কঠিন হতে পারে, তবে অধিকাংশ ক্ষেত্রে নারীদের শেষ মাসিকের প্রথম দিন থেকে গর্ভধারণের সপ্তাহ গণণা করা হয়। এ পদ্ধতিতে:
গর্ভাবস্থার শুরু: নারীদের শেষ মাসিকের প্রথম দিন থেকে হিসাব শুরু হয়।
সম্ভাব্য প্রসবের তারিখ (Estimated Due Date - EDD): শেষ মাসিকের প্রথম দিনের সাথে ২৮০ দিন বা ৪০ সপ্তাহ যোগ করলে সম্ভাব্য প্রসবের তারিখ পাওয়া যায়।
২. আল্ট্রাসাউন্ড:
গর্ভধারণের শুরুর দিকে আল্ট্রাসাউন্ড পরীক্ষা করে ভ্রূণের আকার অনুযায়ী গর্ভধারণের সঠিক সময় নির্ধারণ করা যেতে পারে। এটি বিশেষভাবে উপকারী যখন শেষ মাসিকের তারিখ মনে না থাকে বা মাসিক চক্র অনিয়মিত হয়।
গর্ভাবস্থার সময়কালের বিভাজন সমূহ:
গর্ভাবস্থার সময়কালকে ৩ ভাগে ভাগ করা হয়। যথা:
- প্রথম ত্রৈমাসিক (First Trimester): ১ম সপ্তাহ থেকে ১২ সপ্তাহ।
- দ্বিতীয় ত্রৈমাসিক (Second Trimester): ১৩ সপ্তাহ থেকে ২৬ সপ্তাহ।
- তৃতীয় ত্রৈমাসিক (Third Trimester): ২৭ সপ্তাহ থেকে প্রসব পর্যন্ত।
এই পদ্ধতি অনুসরণ করে আপনি গর্ভাবস্থার সপ্তাহ এবং সম্ভাব্য প্রসবের সময় জানতে পারবেন।
১ সপ্তাহে ভ্রূণের সাইজ:
গর্ভাবস্থার
প্রথম সপ্তাহে ভ্রূণ আসলে তখনও তৈরি হয় না। প্রথম সপ্তাহটি সাধারণত মাসিক চক্রের
শুরুর দিন থেকে গণনা করা হয়, এবং এ সময় ডিম্বাণু
নিষিক্ত হয় না। ডিম্বাণু নিষিক্ত হওয়ার প্রক্রিয়া সাধারণত মাসিক চক্রের দ্বিতীয়
সপ্তাহে ঘটে, এবং এর পরে ভ্রূণের
বিকাশ শুরু হয়। তাই গর্ভাবস্থার প্রথম সপ্তাহে কোনো ভ্রূণের আকার আকৃতি বা সাইজ
থাকে না। ভ্রূণটির আকার নির্ধারণ করা সাধারণত তৃতীয় বা চতুর্থ সপ্তাহের দিকে শুরু
হয়, যখন নিষিক্ত ডিম্বাণুটি বিভক্ত হয়ে একটি
ছোট কোষ গোষ্ঠীতে পরিণত হয়, যাকে "ব্লাস্টোসিস্ট"
(blastocyst) বলা হয়।
১ সপ্তাহে প্রেগন্যাসির লক্ষণ:
গর্ভাবস্থার
প্রথম সপ্তাহে সাধারণত নির্দিষ্ট কোনো লক্ষণ দেখা যায় না, কারণ এ সময়ে ডিম্বাণু ও শুক্রাণুর মিলন ঘটে না এবং
প্রকৃত গর্ভধারণ প্রক্রিয়া শুরু হয় না। যেহেতু প্রথম সপ্তাহটি শেষ মাসিক চক্রের
প্রথম দিন থেকে গণনা করা হয়, তাই এই সময়ে আপনার
শরীরে মাসিকের মতো সাধারণ লক্ষণগুলোই থাকতে পারে, যেমন:
মাসিকের রক্তপাত:
মাসিক চক্রের
কারণে রক্তপাত হয়, যেহেতু এটি শেষ
মাসিকের সময়। হরমোনের পরিবর্তনের কারণে কিছু নারী মাসিকের সময় রক্তপাতের পরিমাণ
বা সময়ে পরিবর্তন লক্ষ্য করতে পারেন। যদিও প্রথম সপ্তাহে রক্তপাত সাধারণত মাসিকের
অংশ, তবে গর্ভাবস্থার কিছু ক্ষেত্রে হরমোনের
অস্বাভাবিক পরিবর্তনের কারণে রক্তপাত হতে পারে, যা কখনো কখনো
গর্ভাবস্থার লক্ষণ হতে পারে।
পেটে ব্যথা বা অস্বস্তি:
মাসিকের সময়ে
সাধারণত পেটে সামান্য ব্যথা বা ক্র্যাম্প হতে পারে। ঠিক তেমনি প্রথম সপ্তাহে পেটে
ব্যথা সাধারণত মাসিকের কারণে হয়ে থাকে। এই ব্যথা হালকা থেকে মাঝারি মাত্রার হতে
পারে এবং এটি মাসিকের সময় স্বাভাবিক। মাসিকের সময় হরমোনের পরিবর্তনের কারণে কিছু
নারীর পেটে গ্যাস বা ফোলাভাবের সমস্যাও হতে পারে, যা অস্বস্তি
সৃষ্টি করতে পারে।
মেজাজের পরিবর্তন:
যদিও প্রথম
সপ্তাহটি প্রকৃত গর্ভধারণের সময় নয়,
তবে শরীরে
প্রজনন হরমোনের মাত্রা বাড়তে থাকায়,
মেজাজে কিছু
পরিবর্তন আসতে পারে। মাসিক চক্রের শুরুতে ইস্ট্রোজেন এবং প্রোজেস্টেরন হরমোনের
মাত্রা বাড়া বা কমার কারণে নারীরা আবেগপ্রবণ, খিটখিটে বা
উদ্বিগ্ন অনুভব করতে পারেন। পেটে ক্র্যাম্প বা অন্যান্য মাসিকের লক্ষণগুলি
মন-মেজাজে প্রভাব ফেলতে পারে, যা মেজাজের দ্রুত
পরিবর্তনের কারণ হতে পারে।
পিঠের নিচে ব্যথা:
মাসিক চক্রের
সময় অনেক নারী পিঠের নিচের দিকে ব্যথা অনুভব করেন। এই ব্যথা সাধারণত হালকা থেকে
মাঝারি মাত্রার হয়ে থাকে এবং মাসিক শেষ হওয়ার সাথে সাথে কমে যায়। মাসিক চক্রের
সময় হরমোনের পরিবর্তন পিঠের মাংসপেশীতে প্রভাব ফেলতে পারে, যা ব্যথার কারণ হতে পারে। মানসিক চাপ বা শারীরিক
ক্লান্তি থেকেও পিঠে ব্যথা হতে পারে।
মাথাব্যাথা:
১ সপ্তাহের
গর্ভাবস্থায় সাধারণত গর্ভাবস্থার খুব স্পষ্ট লক্ষণগুলো দেখা যায় না, তবে কিছু মহিলারা এই সময়ে কিছু প্রাথমিক লক্ষণ অনুভব
করতে পারেন, যার মধ্যে মাথাব্যথা
অন্যতম। গর্ভাবস্থার শুরুতে হরমোনের পরিবর্তন এবং রক্ত সঞ্চালনের মাত্রা বৃদ্ধি
পাওয়ার কারণে মাথাব্যথা হতে পারে। এছাড়া স্ট্রেস, ঘুমের অভাব, ডিহাইড্রেশন বা ক্যাফেইনের মাত্রা কমে যাওয়াও
মাথাব্যথার কারণ হতে পারে।
প্রথম সপ্তাহে পেটের অবস্থা:
১ সপ্তাহের
গর্ভাবস্থায় সাধারণত পেটে তেমন কোনো দৃশ্যমান পরিবর্তন হয় না। এ সময়টি খুব
প্রাথমিক পর্যায়, এবং গর্ভাবস্থার
লক্ষণগুলো শরীরে খুব স্পষ্টভাবে প্রকাশ পেতে শুরু করে না। তবে কিছু মহিলারা
প্রাথমিক লক্ষণ হিসেবে হালকা ফোলাভাব বা পেটে গ্যাসের মতো অনুভব করতে পারেন।
হরমোনের
পরিবর্তন এবং প্রোজেস্টেরনের মাত্রা বাড়ার কারণে পেটে এই ধরনের অনুভূতি হতে পারে।
এই পর্যায়ে ভ্রূণ খুব ছোট আকারে থাকে এবং জরায়ুর ভেতরে প্রতিস্থাপন হতে শুরু
করে। পেটের আকার বা আকৃতিতে তেমন কোনো পরিবর্তন দেখতে সাধারণত আরও কয়েক সপ্তাহ
সময় লাগে।
প্রথম সপ্তাহে
যদি গর্ভধারণের পরিকল্পনা করেন, তাহলে কিছু
স্বাস্থ্যকর জীবনধারা অনুসরণ করা গুরুত্বপূর্ণ:
- সুষম খাবার খাওয়া
- প্রচুর পরিমাণে পানি পান করা
- নিয়মিত ব্যায়াম করা
- ধূমপান ও অ্যালকোহল পরিহার করা
- ফোলিক অ্যাসিড সাপ্লিমেন্ট নেওয়া
আপনার যদি আরো
নির্দিষ্ট তথ্য বা পরামর্শের প্রয়োজন হয়, তবে ডাক্তার
বা স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞের সাথে পরামর্শ করুন।
কোন মন্তব্য নেই