আপেল সিডার ভিনেগারের ১০টি উপকারিতা এবং ব্যবহার
আপেল সিডার ভিনেগার সাম্প্রতিক বছরগুলোতে অত্যন্ত জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে, বিশেষ করে স্বাস্থ্য ও সুস্থতার জন্য যারা সচেতন তাদের মধ্যে। আপেল সিডার ভিনেগার একটি প্রাকৃতিক উপাদান হওয়ায় এটি স্বাস্থ্য থেকে শুরু করে সৌন্দর্য, ঘরোয়া পরিচ্ছন্নতা এবং রান্নায় বহুমুখীভাবে ব্যবহার করা যায়। এর সহজলভ্যতা ও নানাবিধ ব্যবহারযোগ্যতার কারণে এটি প্রতিদিনের জীবনে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। আজকে আমরা আপেল সিডার ভিনেগারের প্রধান ১০টি উপকারিতা নিয়ে আলোচনা করবো।
আপেল সিডার
ভিনেগার কী?
আপেল সিডার ভিনেগার (Apple Cider Vinegar) হলো আপেল থেকে প্রস্তুত করা একটি প্রাকৃতিক ভিনেগার যা এর স্বাস্থ্য উপকারিতার জন্য খুবই জনপ্রিয়। এটি আপেলকে ফারমেন্টেশন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে তৈরি করা হয়। এই প্রক্রিয়ায় আপেলকে প্রথমে ক্রাশ করে রস বের করা হয় এবং তারপর সেই রসকে ফারমেন্ট করে এসিটিক এসিডে পরিণত করা হয়। এসিটিক এসিডই এই ভিনেগারের মূল সক্রিয় উপাদান, যা এর ভিন্ন স্বাদ এবং স্বাস্থ্য উপকারিতা প্রদান করে।
বর্তমান সময়ে প্রাকৃতিক ও অর্গানিক জীবনযাত্রার প্রতি মানুষের ঝোঁক বেড়ে গেছে। মানুষ কৃত্রিম ও রাসায়নিক পদার্থের পরিবর্তে প্রাকৃতিক ও স্বাস্থ্যকর উপায় খুঁজছে। আপেল সিডার ভিনেগার একটি অর্গানিক ও প্রাকৃতিক উপাদান হওয়ায় এটি স্বাস্থ্য সচেতন মানুষের কাছে প্রিয় হয়ে উঠেছে।
আপেল সিডার ভিনেগারের প্রধান উপাদানসমূহ:
• এসিটিক এসিড: এটি আপেল সিডার ভিনেগারের মূল
সক্রিয় উপাদান, যা বিপাকক্রিয়া উন্নত
করে এবং জীবাণুনাশক বৈশিষ্ট্য প্রদান করে।
• প্রোবায়োটিকস ও এনজাইম: ফারমেন্টেশনের সময়
এতে প্রোবায়োটিকস এবং এনজাইম তৈরি হয়, যা হজমশক্তি
বাড়াতে সহায়ক।
• ভিটামিন ও খনিজ: এতে ভিটামিন বি ও সি এবং
কিছু মিনারেলস যেমন পটাশিয়াম থাকে।
আপেল সিডার ভিনেগার ব্যবহারের নিয়ম:
• ১-২ চামচ আপেল
সিডার ভিনেগার এক গ্লাস পানিতে মিশিয়ে সকালে খালি পেটে পান করুন। এটি মেটাবলিজম
বাড়িয়ে ওজন কমাতে সাহায্য করবে।
• খাওয়ার ২০-৩০
মিনিট আগে এক গ্লাস পানির সাথে ১ চামচ আপেল সিডার ভিনেগার মিশিয়ে পান করলে ক্ষুধা
কমে যায় এবং কম ক্যালোরি গ্রহণ করা হয়।
• সালাদ ড্রেসিং
বা সস হিসেবে আপেল সিডার ভিনেগার ব্যবহার করতে পারেন, যা স্বাস্থ্যকর খাবার গ্রহণে সহায়ক।
• সরাসরি আপেল সিডার ভিনেগার পান করা উচিত নয়, কারণ এতে থাকা এসিটিক এসিড গলা এবং দাঁতের এনামেল
ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে।
• অতিরিক্ত ব্যবহার এড়িয়ে চলুন এবং প্রতিদিন
সর্বাধিক ২ চামচ ব্যবহার করার পরামর্শ দেওয়া হয়।
• কোনো স্বাস্থ্য সমস্যা থাকলে বা নিয়মিত ওষুধ
সেবন করলে চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া ভিনেগার নেওয়া উচিত নয়।
আপেল সিডার ভিনেগারের ১০টি উপকারিতা:
আপেল সিডার
ভিনেগার অনেক স্বাস্থ্য উপকারিতা প্রদান করে। এখানে আপেল সিডার ভিনেগারের প্রধান
১০টি উপকারিতা তুলে ধরা হলো:
১. হজমের উন্নতি:
আপেল সিডার
ভিনেগার হজমের উন্নতিতে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করে। এটি প্রাকৃতিক উপায়ে হজম
প্রক্রিয়াকে ত্বরান্বিত করতে সাহায্য করে এবং হজমজনিত বিভিন্ন সমস্যার সমাধানে
কার্যকর। আপেল সিডার ভিনেগার এসিটিক এসিড সমৃদ্ধ, যা পাকস্থলীর
পিএইচ স্তর সঠিক রাখতে সহায়ক। এটি হজম এনজাইমগুলির কার্যকারিতা বৃদ্ধি করে এবং
খাবারকে সঠিকভাবে ভেঙে ফেলতে সাহায্য করে।
এতে
প্রোবায়োটিকস থাকে, যা অন্ত্রের উপকারী
ব্যাকটেরিয়ার বৃদ্ধিতে সহায়ক। এই ব্যাকটেরিয়াগুলো হজম প্রক্রিয়াকে উন্নত করে
এবং খাবার থেকে পুষ্টি শোষণ করতে সাহায্য করে। খাবারের পরে গ্যাস, অম্বল এবং ফোলাভাবের সমস্যা হলে, আপেল সিডার ভিনেগার এটি দূর করতে সাহায্য করে। এটি
পাকস্থলীর এসিডিটি বাড়িয়ে খাবার হজমে সহায়ক ভূমিকা পালন করে।
আপেল সিডার
ভিনেগার খাবারকে হজম করতে সাহায্য করার জন্য প্রয়োজনীয় এনজাইমগুলির কার্যকারিতা
বাড়ায়। এটি খাবার থেকে পুষ্টি উপাদান শোষণ করার প্রক্রিয়াকে ত্বরান্বিত করে।
হজম প্রক্রিয়ার সমস্যার কারণে অনেক সময় বমি বমি ভাব অনুভব হয়। আপেল সিডার
ভিনেগার এই ধরনের সমস্যাকে হ্রাস করতে পারে এবং পাকস্থলীর স্বাভাবিক কার্যকারিতা
বজায় রাখতে সহায়ক।
২. ওজন কমাতে সহায়ক:
আপেল সিডার
ভিনেগার ওজন কমানোর একটি জনপ্রিয় প্রাকৃতিক উপায় হিসেবে বিবেচিত হয়। এর মধ্যে
থাকা উপাদানগুলো শরীরের মেটাবলিজম উন্নত করতে এবং ক্ষুধা নিয়ন্ত্রণে সহায়ক
ভূমিকা পালন করে। আপেল সিডার ভিনেগার ক্ষুধা কমাতে সাহায্য করে, যা অতিরিক্ত খাবার খাওয়ার প্রবণতা কমিয়ে দেয়।
এতে এসিটিক
এসিড থাকে, যা খাওয়ার পরে দীর্ঘ
সময় পর্যন্ত পেট ভরা রাখে এবং ক্ষুধা নিয়ন্ত্রণে রাখে। এটি শরীরের মেটাবলিজম
বৃদ্ধি করে, যার ফলে ক্যালোরি
দ্রুত পুড়ে যায়। মেটাবলিজমের গতি বাড়ানোর ফলে শরীর দ্রুত চর্বি পোড়াতে সক্ষম
হয়, যা ওজন কমাতে সহায়ক।
আপেল সিডার
ভিনেগার রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে এবং ইনসুলিন সংবেদনশীলতা
বাড়ায়। নিয়মিত আপেল সিডার ভিনেগার সেবন পেটের চর্বি কমাতে সহায়ক হতে পারে। এটি
চর্বি ভাঙতে এবং শরীর থেকে তা নির্গমিত করতে সাহায্য করে।
৩. শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে:
আপেল সিডার
ভিনেগার রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে সহায়ক হিসেবে প্রমাণিত হয়েছে। এর
মধ্যে থাকা এসিটিক এসিড রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে, যা ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য বিশেষভাবে উপকারী হতে পারে।
আপেল সিডার
ভিনেগার ইনসুলিন সংবেদনশীলতা বাড়াতে সাহায্য করে, যা শরীরের
কোষগুলিকে ইনসুলিনের প্রতি আরও বেশি প্রতিক্রিয়াশীল করে তোলে। ইনসুলিন
সংবেদনশীলতা বৃদ্ধি পেলে শরীর সহজেই গ্লুকোজ ব্যবহার করতে পারে এবং রক্তে শর্করার
মাত্রা কম থাকে।
আপেল সিডার
ভিনেগার খাবারের পরে রক্তে শর্করার বৃদ্ধি হ্রাস করতে সহায়ক। এটি কার্বোহাইড্রেট
থেকে গ্লুকোজের পরিবর্তন ধীরগতিতে করে,
যা রক্তে
শর্করার স্তরকে স্থিতিশীল রাখে। এটি অন্ত্রের গ্লুকোজ শোষণ প্রক্রিয়াকে ধীর করে
দেয়, যা খাওয়ার পরে রক্তে শর্করার মাত্রা দ্রুত
বেড়ে যাওয়া থেকে প্রতিরোধ করে।
৪. ত্বকের যত্নে উপকারী:
আপেল সিডার
ভিনেগার ত্বকের যত্নে অনেক উপকারী উপাদান হিসেবে পরিচিত। এটি ত্বকের পিএইচ
ব্যালেন্স বজায় রাখতে, ব্রণ দূর করতে এবং
অন্যান্য ত্বকের সমস্যা সমাধানে কার্যকর ভূমিকা পালন করে। আপেল সিডার ভিনেগার
ত্বকের প্রাকৃতিক পিএইচ স্তর বজায় রাখতে সাহায্য করে। সঠিক পিএইচ স্তর ত্বককে
সুস্থ ও উজ্জ্বল রাখে এবং ত্বকের সংবেদনশীলতা কমায়।
আপেল সিডার
ভিনেগারের মধ্যে থাকা অ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়াল ও অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি বৈশিষ্ট্য
ব্রণ ও ব্রণের দাগ কমাতে সহায়ক। এটি ত্বকের রোমকূপ থেকে অতিরিক্ত তেল এবং
ব্যাকটেরিয়া দূর করে, যা ব্রণের মূল কারণ।
আপেল সিডার ভিনেগার ত্বকের কালো দাগ,
সান ট্যান, এবং রঙের অসমতা কমাতে সহায়ক। এটি ত্বকের মৃত কোষ দূর
করে এবং নতুন কোষের বৃদ্ধি ত্বরান্বিত করে।
এটি একটি
প্রাকৃতিক টোনার হিসেবে কাজ করে, যা ত্বকের উজ্জ্বলতা
বৃদ্ধি করে এবং ত্বককে মসৃণ ও সতেজ করে তোলে। আপেল সিডার ভিনেগার ত্বকের সূক্ষ্ম
রেখা এবং বলিরেখা কমাতে সাহায্য করে। এটি ত্বকের কোলাজেন উৎপাদন বৃদ্ধি করে, যা ত্বককে টানটান এবং যুবতী রাখতে সহায়ক।
কিভাবে ব্যবহার
করবেন:
টোনার হিসেবে
ব্যবহার:
এক অংশ আপেল সিডার ভিনেগার ও দুই অংশ পানি
মিশিয়ে একটি স্প্রে বোতলে রাখুন। প্রতিদিন সকালে ও রাতে মুখ পরিষ্কার করার পরে
এটি ত্বকে স্প্রে করুন বা তুলোর সাহায্যে লাগান।
ব্রণ কমানোর
জন্য:
ব্রণযুক্ত স্থানে এক ফোঁটা আপেল সিডার
ভিনেগার ও পানি মিশিয়ে লাগান। এটি ব্রণের ব্যাকটেরিয়া ধ্বংস করতে এবং প্রদাহ
কমাতে সাহায্য করবে।
ফেস মাস্ক
হিসেবে:
মুলতানি মাটি, মধু বা ওটমিলের সাথে আপেল সিডার ভিনেগার মিশিয়ে একটি ফেস মাস্ক তৈরি করুন। এটি ত্বককে গভীর থেকে পরিষ্কার করবে এবং উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি করবে।
৫. শরীরের বীষ দূর করে:
আপেল সিডার
ভিনেগার প্রাকৃতিক ডিটক্সিফায়ার হিসেবে পরিচিত, যা শরীরের
টক্সিন দূর করতে এবং অভ্যন্তরীণ সিস্টেম পরিষ্কার রাখতে সহায়ক। এর মধ্যে থাকা
উপাদানগুলো লিভার, কিডনি, এবং পুরো পাচনতন্ত্রকে কার্যকরভাবে পরিষ্কার করে।
আপেল সিডার
ভিনেগার লিভারের কার্যকারিতা উন্নত করে এবং লিভারের মাধ্যমে টক্সিন পরিষ্কার করতে
সাহায্য করে। এতে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট উপাদান লিভারকে ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা
করে এবং তার কার্যক্ষমতা বাড়ায়। আপেল সিডার ভিনেগার হজমশক্তি বাড়াতে এবং
পাচনতন্ত্র পরিষ্কার রাখতে সহায়ক। এটি অন্ত্রের স্বাস্থ্যকে উন্নত করে এবং শরীর
থেকে বর্জ্য পদার্থ দ্রুত বের করতে সাহায্য করে।
আপেল সিডার
ভিনেগার শরীরের পিএইচ স্তর নিয়ন্ত্রণে সহায়ক, যা শরীরের
অম্লীয়তা কমিয়ে ক্ষারীয় পরিবেশ তৈরি করে। এই ক্ষারীয় পরিবেশ শরীরের কোষগুলিকে
কার্যকরভাবে কাজ করতে সহায়তা করে এবং টক্সিন বের করতে সাহায্য করে। আপেল সিডার
ভিনেগারে প্রচুর অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট থাকে, যা ফ্রি
র্যাডিক্যালসের ক্ষতিকর প্রভাব থেকে শরীরকে রক্ষা করে। এটি কোষের ক্ষয় রোধ করে
এবং শরীরকে ভিতর থেকে পরিষ্কার রাখতে সাহায্য করে।
৬. কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে সহায়ক:
আপেল সিডার
ভিনেগার কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারে। এর মধ্যে থাকা এসিটিক
এসিড কোলেস্টেরলের মাত্রা কমাতে এবং হৃদযন্ত্রের স্বাস্থ্যের উন্নতি করতে সহায়ক।
আপেল সিডার ভিনেগার শরীরের "খারাপ" কোলেস্টেরল (LDL) কমাতে সহায়ক। এটি লিভারের কার্যক্ষমতা বাড়িয়ে
কোলেস্টেরল ভাঙতে সাহায্য করে এবং রক্তনালির দেয়াল থেকে জমাট বাঁধা চর্বি দূর
করে।
আপেল সিডার
ভিনেগার ট্রাইগ্লিসারাইডের মাত্রা হ্রাস করতে সহায়ক, যা রক্তে ফ্যাটের একটি প্রধান উপাদান। উচ্চ
ট্রাইগ্লিসারাইড মাত্রা হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়াতে পারে, তাই এটি নিয়ন্ত্রণে রাখা গুরুত্বপূর্ণ। আপেল সিডার
ভিনেগার অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ,
যা ফ্রি
র্যাডিক্যালস থেকে রক্তনালিকে রক্ষা করে। এটি রক্ত সঞ্চালনকে উন্নত করতে এবং
হৃদরোগের ঝুঁকি কমাতে সহায়ক।
৭. অ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়াল বৈশিষ্ট্য:
আপেল সিডার
ভিনেগার তার অ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়াল বৈশিষ্ট্যের জন্য পরিচিত, যা জীবাণু,
ব্যাকটেরিয়া
এবং অন্যান্য ক্ষতিকারক মাইক্রোবের বিরুদ্ধে কার্যকরভাবে কাজ করতে সক্ষম। এর মধ্যে
থাকা এসিটিক এসিড ব্যাকটেরিয়া ধ্বংস করতে সাহায্য করে, যা বিভিন্ন ধরনের সংক্রমণ ও ত্বকের সমস্যার সমাধানে
সহায়ক।
আপেল সিডার
ভিনেগার শুধুমাত্র ব্যাকটেরিয়া নয়,
ফাঙ্গাল
সংক্রমণের বিরুদ্ধেও কার্যকর। এটি বিভিন্ন প্রকারের ফাঙ্গাস এবং ছত্রাকের বিরুদ্ধে
কাজ করে। এটি পায়ের ফাঙ্গাস, নখের ইনফেকশন এবং
অন্যান্য ত্বকের ফাঙ্গাল সংক্রমণ প্রতিরোধে ব্যবহার করা যায়।
ব্রণের একটি
প্রধান কারণ হলো ত্বকের রোমকূপে ব্যাকটেরিয়ার বৃদ্ধি। আপেল সিডার ভিনেগার ত্বকের
ব্যাকটেরিয়া ধ্বংস করে এবং ব্রণ কমাতে সাহায্য করে। এটি ত্বকের তেল ও ময়লা
পরিষ্কার করতে এবং রোমকূপকে মুক্ত রাখতে সহায়ক। আপেল সিডার ভিনেগার প্রাকৃতিক
জীবাণুনাশক হিসেবে কাজ করে, যা রান্নাঘর, বাথরুম, এবং অন্যান্য স্থানের
পৃষ্ঠ পরিষ্কার করতে সহায়ক।
কিভাবে
ব্যবহার করবেন:
ত্বকের
সমস্যার জন্য:
এক অংশ আপেল সিডার ভিনেগার ও দুই অংশ পানি
মিশিয়ে একটি তুলোর বলে ত্বকের সমস্যাযুক্ত স্থানে লাগান। এটি ব্যাকটেরিয়া ধ্বংস
করতে এবং প্রদাহ কমাতে সহায়ক হবে।
ফাঙ্গাল
সংক্রমণের জন্য:
আক্রান্ত স্থানে সরাসরি আপেল সিডার ভিনেগার
প্রয়োগ করতে পারেন অথবা পানির সাথে মিশিয়ে পায়ের ফাঙ্গাস বা নখের ইনফেকশনের
জন্য ব্যবহার করতে পারেন।
জীবাণুনাশক
হিসেবে ব্যবহার:
এক গ্লাস পানিতে ১-২ চামচ আপেল সিডার
ভিনেগার মিশিয়ে এটি একটি স্প্রে বোতলে ভরে বিভিন্ন পৃষ্ঠ পরিষ্কার করতে ব্যবহার
করুন।
৮. শক্তি বৃদ্ধি করে:
আপেল সিডার
ভিনেগার শক্তি বৃদ্ধিতে সহায়ক হতে পারে। আপেল সিডার ভিনেগার শরীরের মেটাবলিজম
বাড়াতে সাহায্য করে, যা খাবারকে শক্তিতে
রূপান্তরিত করতে দ্রুততা আনে। এটি শরীরের ক্যালোরি বার্ন করার ক্ষমতা বাড়ায়, ফলে শক্তি বৃদ্ধি পায়।
এটি রক্তে
গ্লুকোজের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে সহায়ক,
যা শরীরের
শক্তির স্তরকে স্থিতিশীল রাখে। গ্লুকোজ শরীরের প্রধান শক্তির উৎস, তাই এর নিয়ন্ত্রণ শক্তি স্তরে ইতিবাচক প্রভাব ফেলে।
আপেল সিডার ভিনেগার খাওয়ার আগে গ্রহণ করলে তা ক্ষুধা কমায় এবং দীর্ঘ সময়
পর্যন্ত পূর্ণতা অনুভব করতে সহায়ক হয়। এর ফলে অতিরিক্ত খাওয়া কমে যায় এবং
শক্তির স্তর নিয়ন্ত্রণে থাকে।
আপেল সিডার
ভিনেগার পটাসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, এবং অন্যান্য ভিটামিন ও খনিজ উপাদান সমৃদ্ধ, যা শক্তি উৎপাদনে সহায়ক। এটি শরীর থেকে টক্সিন দূর করতে
সহায়ক, যা শরীরের শক্তি বাড়াতে এবং ক্লান্তি দূর
করতে সাহায্য করে। শরীরের টক্সিন মুক্ত থাকার ফলে শক্তি স্তর বাড়তে পারে।
৯. সংক্রমণ প্রতিরোধ করে:
আপেল সিডার
ভিনেগার সংক্রমণ প্রতিরোধে একটি কার্যকর প্রাকৃতিক উপাদান হিসেবে পরিচিত। এর
অ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়াল, অ্যান্টি-ফাঙ্গাল এবং
অ্যান্টি-ভাইরাল বৈশিষ্ট্য শরীরকে বিভিন্ন ধরনের সংক্রমণ থেকে রক্ষা করতে সহায়ক।
আপেল সিডার
ভিনেগারের এসিটিক এসিড ব্যাকটেরিয়া ধ্বংস করতে সক্ষম, যা সংক্রমণ সৃষ্টি করতে পারে। এটি বিভিন্ন ধরনের
ব্যাকটেরিয়ার বিরুদ্ধে কার্যকর, যেমন
স্ট্যাফাইলোকোক্কাস এবং ই-কোলাই। এটি ফাঙ্গাল সংক্রমণ, যেমন ক্যান্ডিডা এবং পায়ের ফাঙ্গাসের বিরুদ্ধে কার্যকর।
আপেল সিডার ভিনেগার ফাঙ্গাসের বৃদ্ধিকে বাধা দেয় এবং সংক্রমণের সম্ভাবনা কমায়।
আপেল সিডার
ভিনেগার ব্রণের মতো ত্বকের সমস্যার বিরুদ্ধে লড়াই করতে সহায়ক। এটি ত্বকের
ব্যাকটেরিয়া দূর করে এবং প্রদাহ কমাতে সহায়ক, যা সংক্রমণের
ঝুঁকি কমায়। আপেল সিডার ভিনেগারে উপস্থিত পুষ্টি উপাদান এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট
ইমিউন সিস্টেমকে শক্তিশালী করতে সাহায্য করে। একটি শক্তিশালী ইমিউন সিস্টেম
সংক্রমণের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলে।
১০. চুলের যত্নে কার্যকর:
আপেল সিডার
ভিনেগার চুলের যত্নের জন্য একটি প্রাকৃতিক এবং কার্যকর উপাদান। এর অ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়াল, অ্যান্টি-ফাঙ্গাল এবং পিএইচ ব্যালেন্সিং বৈশিষ্ট্য চুলের
স্বাস্থ্য ও সৌন্দর্য বৃদ্ধিতে সহায়ক।
আপেল সিডার
ভিনেগার চুলের পিএইচ স্তর নিয়ন্ত্রণে সহায়ক, যা চুলের
স্বাভাবিক তেল ও হাইড্রেশন বজায় রাখতে সাহায্য করে। এটি চুলকে উজ্জ্বল ও মসৃণ
করে। এটি চুলের বাইরে জমে থাকা ময়লা ও অবশিষ্টাংশ দূর করে, ফলে চুল উজ্জ্বল ও সুস্থ দেখায়।
আপেল সিডার
ভিনেগারের অ্যান্টি-ফাঙ্গাল বৈশিষ্ট্য মাথার ত্বকে ছত্রাকের সংক্রমণ কমাতে সাহায্য
করে, যা চুল পড়া ও খুশকি কমাতে কার্যকর। আপেল
সিডার ভিনেগার রক্ত সঞ্চালন বাড়ায়,
যা চুলের
বৃদ্ধিতে সহায়ক। এটি চুলের ফলিকলগুলির পুষ্টি সরবরাহে সহায়তা করে।
কিভাবে
ব্যবহার করবেন:
চুলের
কন্ডিশনার হিসেবে:
১-২ চামচ আপেল সিডার ভিনেগারকে ১ কাপ পানির
সাথে মিশিয়ে চুল শ্যাম্পুন করার পর ব্যবহার করুন। এটি চুলকে মসৃণ ও উজ্জ্বল করে।
খুশকি
নিয়ন্ত্রণে:
১/৪ কাপ আপেল সিডার ভিনেগার এবং ১/৪ কাপ
পানি মিশিয়ে মাথার ত্বকে ম্যাসেজ করুন। ১৫-২০ মিনিট পরে শ্যাম্পু করে নিন। এটি
খুশকি দূর করতে সাহায্য করবে।
গ্রীস
দূরীকরণ:
চুলে অতিরিক্ত তেল হলে ১-২ চামচ আপেল সিডার
ভিনেগারকে ১ কাপ পানি দিয়ে মিশিয়ে চুলের শ্যাম্পুনের পর ব্যবহার করুন। এটি চুল
থেকে গ্রীস এবং ময়লা দূর করবে।
চুলের
বৃদ্ধিতে সহায়ক:
একটি বাটিতে ২ টেবিল চামচ আপেল সিডার
ভিনেগার এবং ১ টেবিল চামচ নারকেল তেল মিশিয়ে চুলের গোড়ায় ম্যাসেজ করুন। ৩০
মিনিট রেখে শ্যাম্পু করুন। এটি চুলের বৃদ্ধিতে সহায়ক।
সতর্কতা:
• আপেল সিডার ভিনেগার
সরাসরি মাথার ত্বকে ব্যবহার করার আগে ১:১ অনুপাতে পানি দিয়ে মিশিয়ে ব্যবহার করুন, কারণ এটি ত্বকে জ্বালা সৃষ্টি করতে পারে।
• চুলের যত্নের জন্য
এটি সপ্তাহে ১-২ বার ব্যবহার করা উচিত।
আপেল সিডার
ভিনেগার অবশ্যই অনেক উপকারী। তারপরও এটি ব্যবহারের আগে অবশ্যই সঠিক পরিমাণে ও
উপায়ে ব্যবহার করার জন্য বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেওয়া উচিত।
কোন মন্তব্য নেই