Header Ads

শিশুদের কোষ্ঠকাঠিন্য তৈরি করে এমন ১০টি খাবার

শিশুদের কোষ্ঠকাঠিন্য (Constipation in Children) একটি সাধারণ সমস্যা, যা বিভিন্ন কারণে ঘটতে পারে। এটি শিশুর স্বাস্থ্যের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে এবং তাদের স্বাভাবিক জীবনের গুণগত মান কমিয়ে দিতে পারে। কোষ্ঠকাঠিন্যের কারণে শিশুদের পেটের মধ্যে চাপ সৃষ্টি হতে পারে, যা ব্যথা বা অস্বস্তির কারণ হতে পারে। ইহার কারণে হজমের প্রক্রিয়া ব্যাহত হতে পারে, যা পরবর্তীতে অম্লজীর্ণতা বা অ্যাসিডিটি সৃষ্টি করতে পারে। কোষ্ঠকাঠিন্যের ফলে শিশুর খাদ্য থেকে প্রয়োজনীয় পুষ্টি গ্রহণে বিঘ্ন ঘটতে পারে, যা তাদের শারীরিক শক্তি কমিয়ে দিতে পারে।

শিশুদের কোষ্ঠকাঠিন্যে দায়ী ১০ খাবার:

বর্তমান সময়ে শিশুরা প্রায় কোষ্ঠকাঠিন্যে ভুগে থাকে। এই সমস্যার কারণে শিশুরা ছোট বেলা থেকেই শরীরে নানা জটিল অসুখ নিয়ে বড় হয়। নিম্নে এমন ১০টি খাবারের কথা উল্লেখ করা হলো যে গুলো শিশুদের কোষ্ঠকাঠিন্যের জন্য সরাসরি দায়ী।

. দুধ এবং দুধের পণ্য:

শিশুদের কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যায় "দুধ এবং দুধের পণ্য" বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে। অনেক শিশু ল্যাকটোজ সহ্য করতে পারে না, যা তাদের পেটের অস্বস্তি, পেটব্যথা এবং কোষ্ঠকাঠিন্য সৃষ্টি করতে পারে। ল্যাকটোজ অসহিষ্ণুতার কারণে শিশুরা দুধ খাওয়ার পর ডায়রিয়া বা কোষ্ঠকাঠিন্যের মতো সমস্যায় পড়তে পারে।

অনেক দুধের পণ্য যেমন ক্রিম, পনির, সন্দেশ, আইসক্রিম এবং দই বেশি চর্বিযুক্ত বা মাখনের  হতে পারে। অতিরিক্ত চর্বি বা মাখন কোষ্ঠকাঠিন্য বাড়াতে পারে, কারণ এটি হজমে সমস্যা সৃষ্টি করে এবং হজম হতে স্বাভাবিকের চেয়ে অনেক বেশি সময় নিয়ে থাকে।

দুধ এবং দুধের পণ্য শুধুমাত্র প্রোটিন ক্যালসিয়াম সমৃদ্ধ, কিন্তু তাতে ফাইবারের কমতি থাকে। শিশু যদি বেশি দুধ বা দুধের পণ্য খায় এবং ফল, শাকসবজি এবং অন্যান্য ফাইবার সমৃদ্ধ খাবার কম খায়, তাহলে শিশুর কোষ্ঠকাঠিন্য হতে পারে।

. সাদা রুটি এবং সাদা ভাত:

শিশুদের কোষ্ঠকাঠিন্য সমস্যা প্রায়ই সাদা রুটি এবং সাদা ভাতের মতো প্রক্রিয়াজাত শস্য থেকে সৃষ্টি হতে পারে। এই খাবারগুলোতে সাধারণত ফাইবারের অভাব থাকে, যা হজম প্রক্রিয়া এবং পায়খানার স্বাভাবিক কার্যক্রমের ব্যাঘাত তৈরি করতে পারে।

শিশু যদি সাদা রুটি এবং সাদা ভাত বেশি খায়, তবে তাদের শরীরে পানিশূন্যতা সৃষ্টি হতে পারে, কারণ এই খাবারগুলোতে জল শোষণের ক্ষমতা কম থাকে। পর্যাপ্ত পানি পান না করলে কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা বেড়ে যায়।

সাদা রুটি এবং সাদা ভাত অনেক সময় ভারী খাবারের সাথে খাওয়া হয়, যা হজমে সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে। এটি পেটের ভারি অনুভূতি এবং অস্বস্তি সৃষ্টি করে, যা কোষ্ঠকাঠিন্য বাড়াতে পারে।

. মিষ্টি জাতীয় খাবার:

শিশুদের কোষ্ঠকাঠিন্য সমস্যা কিছু ক্ষেত্রে মিষ্টি খাবারের অতিরিক্ত সেবনের কারণে সৃষ্টি হতে পারে। মিষ্টি খাবারের মধ্যে থাকা চিনি এবং প্রক্রিয়াজাত উপাদানগুলি কোষ্ঠকাঠিন্যের জন্য বিশেষ দায়ী হতে পারে।

অতিরিক্ত চিনি হজম প্রক্রিয়াকে বিঘ্নিত করতে পারে, যা কোষ্ঠকাঠিন্য সৃষ্টি করে। এটি শরীরে পানির পরিমাণ কমিয়ে দেয়, যা পায়খানা কঠিন করে ফেলতে পারে। মিষ্টি খাবার খেলে সাধারণত পানি পান করার অভ্যাস কমে যায়, কারণ শিশুরা প্রায়ই এসব খাবার গ্রহণের সময় অন্যান্য তরল গ্রহণ করে না। আর এই পানি শূন্যতা কোষ্ঠকাঠিন্য সৃষ্টি করে।

বেশিরভাগ মিষ্টি খাবার যেমন ক্যান্ডি, কেক, বিস্কুট, চকলেট, ললিপপ, আইসক্রিমে সাধারণত ফাইবার থাকে না। ফাইবার পেটের স্বাস্থ্যের জন্য অপরিহার্য এবং এই খাবার গুলোতে ফাইবার না থাকায় কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা বৃদ্ধি পায়।

মিষ্টি খাবার সাধারণত প্রক্রিয়াজাত হয় এবং এতে কৃত্রিম উপাদান, রঙ, এবং কনজারভেটিভ থাকতে পারে। এসব উপাদান শরীরের স্বাভাবিক হজম প্রক্রিয়ায় বিঘ্ন ঘটাতে পারে। মিষ্টি খাবার কিছু ক্ষেত্রে ভারী হতে পারে এবং সহজে হজম হতে পারে না। এতে শিশুর পেটে অস্বস্তি সৃষ্টি হয়, যা হজম প্রক্রিয়া এবং পায়খানার কার্যক্রমকে প্রভাবিত করে।

. প্রক্রিয়াজাত খাবার:

শিশুদের কোষ্ঠকাঠিন্য সমস্যা প্রক্রিয়াজাত খাবারের কারণে সৃষ্টি হতে পারে। প্রক্রিয়াজাত খাবারগুলো সাধারণত অস্বাস্থ্যকর হয় এবং পুষ্টির অভাব থাকে। এই খাবার গুলো বিভিন্ন রাসায়নিক উপাদান সমৃদ্ধ হয়, যা হজমের উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলে।

প্রক্রিয়াজাত খাবারগুলি যেমন স্ন্যাকস, প্যাকেজড খাদ্য, কনজারভেটিভ ফুডস, কেক, স্যান্ডউইচ, ক্রিমরোল, ইত্যাদিতে  সাধারণত ফাইবার থাকে না। আর এই ফাইবারের অভাবে শিশুদের কোষ্ঠকাঠিন্য বেড়ে যায়।

অনেক প্রক্রিয়াজাত খাবারে উচ্চ মাত্রার চিনি এবং চর্বি থাকে। অতিরিক্ত চিনি হজমে সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে এবং চর্বি পেটের ভারি অনুভূতি সৃষ্টি করে, যা কোষ্ঠকাঠিন্যকে আরও বাড়িয়ে দেয়।

প্রক্রিয়াজাত খাবারে বিভিন্ন সংরক্ষণকারী এবং রাসায়নিক উপাদান থাকে, যা কিছু ক্ষেত্রে হজম প্রক্রিয়াকে বিঘ্নিত করতে পারে। প্রক্রিয়াজাত খাবারগুলি আকর্ষণীয় স্বাদ এবং চেহারা দিয়ে তৈরি হয়, যা শিশুদেরকে বেশি খাওয়াতে প্রলুব্ধ করে। কিন্তু এই খাবারগুলি স্বাস্থ্যকর নয় এবং তাদের পাকস্থলীর সমস্যা তৈরি করে।

. কাঁচা বা আধা-পাকা ফল:

শিশুদের কোষ্ঠকাঠিন্য সমস্যা কাঁচা বা আধা-পাকা ফল খাওয়ার কারণে হতে পারে। কাঁচা বা আধা-পাকা ফলগুলোতে ফাইবারের গঠন সম্পূর্ণ পরিপক্ব থাকে না, যা হজম প্রক্রিয়াকে ব্যাহত করতে পারে। ফাইবার হজমের জন্য খুব গুরুত্বপূর্ণ, এবং অপরিপক্ব ফাইবার হজমে সমস্যা সৃষ্টি করে কোষ্ঠকাঠিন্যের ঝুঁকি বাড়ায়।

কিছু কাঁচা বা আধা-পাকা ফলে স্টার্চের পরিমাণ বেশি থাকে, যা হজম করা কঠিন এবং ধীরে ধীরে পরিপাক হয়। এই ধরণের ফল খেলে পেটে অস্বস্তি এবং কোষ্ঠকাঠিন্য হতে পারে। কাঁচা বা আধা-পাকা ফলে ট্যানিনস এবং কিছু জটিল উপাদান থাকে, যা হজম প্রক্রিয়ায় বিঘ্ন ঘটায়। ট্যানিনস কোষ্ঠকাঠিন্যের জন্য দায়ী হতে পারে, কারণ এটি অন্ত্রের মসৃণ কার্যক্রমকে ধীর করে।

. মশলাদার খাবার:

শিশুদের কোষ্ঠকাঠিন্য সমস্যা মশলাদার খাবারের কারণে হতে পারে, কারণ মশলাদার খাবার হজম প্রক্রিয়ায় বিঘ্ন ঘটাতে পারে এবং পেটের অস্বস্তি সৃষ্টি করে। মশলাদার খাবার অন্ত্রের উপর অতিরিক্ত চাপ ফেলে এবং অন্ত্রের স্বাভাবিক গতিশীলতা বিঘ্নিত করতে পারে। এর ফলে অন্ত্রে মল জমে থাকে এবং পায়খানা কঠিন হয়ে যেতে পারে, যা কোষ্ঠকাঠিন্য সৃষ্টি করে।

মশলায় থাকা ক্যাপসাইসিন অন্ত্রের কার্যক্রমে উত্তেজনা সৃষ্টি করতে পারে। এটি পেটে ব্যথা এবং মলের পাসেজে সমস্যার সৃষ্টি করে, যা কোষ্ঠকাঠিন্য বাড়াতে পারে। মশলাদার খাবারের সাথে যদি পর্যাপ্ত ফাইবার সমৃদ্ধ খাবার না থাকে, তবে হজমে সমস্যা হতে পারে। ফাইবারের অভাব কোষ্ঠকাঠিন্য বাড়িয়ে তুলতে পারে।

. ফাস্ট ফুড খাবার:

শিশুদের কোষ্ঠকাঠিন্য সমস্যা ফাস্ট ফুডের কারণে হতে পারে, কারণ ফাস্ট ফুডে সাধারণত ফাইবার কম থাকে এবং এগুলি চর্বি, চিনি, এবং প্রক্রিয়াজাত উপাদানে সমৃদ্ধ। এসব খাবার হজম প্রক্রিয়া বিঘ্নিত করে এবং অন্ত্রের স্বাভাবিক কার্যকলাপকে বাধাগ্রস্ত করতে পারে। যেমন পিজ্জা, বার্গার, ফ্রেঞ্চ ফ্রাই, এবং অন্যান্য জাঙ্ক ফুড।

ফাস্ট ফুডে থাকা কৃত্রিম উপাদান এবং প্রিজারভেটিভ হজম প্রক্রিয়ায় বিরূপ প্রভাব ফেলে। এই উপাদানগুলো অন্ত্রের স্বাভাবিক কার্যকলাপকে ব্যাহত করে এবং কোষ্ঠকাঠিন্য বাড়ায়। ফাস্ট ফুডের কারণে শিশুরা পুষ্টিকর খাবার যেমন ফল, শাকসবজি, এবং দানাশস্য কম খায়। এই ধরনের খাবারের অভাবে অন্ত্রে মল তৈরি এবং চলমান প্রক্রিয়াকে ধীর করে দেয়, যার ফলে কোষ্ঠকাঠিন্য হতে পারে।

. তৈলাক্ত গুরু পাক খাবার:

শিশুদের কোষ্ঠকাঠিন্য তৈলাক্ত গুরুপাক খাবারের কারণে হতে পারে। এই ধরনের খাবার হজমে কঠিন এবং পেটে ভারি অনুভূতি তৈরি করতে পারে, যা অন্ত্রের স্বাভাবিক কার্যকলাপকে বাধাগ্রস্ত করতে পারে। তৈলাক্ত গুরুপাক খাবার সাধারণত চর্বি এবং তেলের পরিমাণে সমৃদ্ধ হয়। এই উপাদানগুলো ধীরে হজম হয়, যা হজম প্রক্রিয়াকে ধীর করে দেয় এবং অন্ত্রের কার্যকলাপকে বিঘ্নিত করে। ফলে মল কঠিন হয়ে যায় এবং কোষ্ঠকাঠিন্যের সৃষ্টি হয়।

. গ্লুটেন যুক্ত খাবার:

গ্লুটেন হলো এক ধরনের প্রোটিন যা মূলত গম, বার্লি, রাইসহ কিছু শস্যে পাওয়া যায়। গ্লুটেনযুক্ত খাবার শিশুর অন্ত্রের কার্যকলাপকে প্রভাবিত করে কোষ্ঠকাঠিন্য বাড়িয়ে দিতে পারে। কিছু শিশুদের গ্লুটেন হজম করতে সমস্যা হয়, বিশেষ করে যারা সিলিয়াক রোগে আক্রান্ত। ক্ষেত্রে গ্লুটেন খেলে অন্ত্রের লাইনিং ক্ষতিগ্রস্ত হয় এবং মল অতিক্রমের প্রক্রিয়া ধীর হয়ে যায়, যার ফলে কোষ্ঠকাঠিন্য দেখা দেয়।

গ্লুটেনযুক্ত খাবার অন্ত্রের প্রদাহ সৃষ্টি করতে পারে, বিশেষ করে যারা গ্লুটেন সহ্য করতে পারে না। অন্ত্রের এই প্রদাহ হজম প্রক্রিয়ায় বাধা সৃষ্টি করে এবং মল কঠিন করে তোলে, ফলে কোষ্ঠকাঠিন্য হয়। গ্লুটেনযুক্ত খাবার খেলে অন্ত্রে পানি শোষণের প্রক্রিয়া কমে যেতে পারে, যার ফলে মল শক্ত হয়ে যায় এবং পায়খানা কঠিন হতে শুরু করে।

১০. মাংস জাতীয় খাবার:

মাংসজাতীয় খাবারে প্রায় কোনো ফাইবার থাকে না, অথচ ফাইবার অন্ত্রের কার্যক্রম সচল রাখতে এবং মল নরম রাখতে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ফাইবারের অভাবে মল শক্ত হয়ে যায় এবং পায়খানা অতিক্রম করা কঠিন হয়ে যায়, যা কোষ্ঠকাঠিন্য সৃষ্টি করে।

মাংসে উচ্চ পরিমাণে প্রোটিন এবং চর্বি থাকে, যা হজমে দীর্ঘ সময় নেয়। অতিরিক্ত চর্বি এবং প্রোটিন অন্ত্রের স্বাভাবিক গতিশীলতাকে ধীর করে দেয় এবং মল পাসের প্রক্রিয়া ব্যাহত হয়, ফলে কোষ্ঠকাঠিন্য দেখা দেয়।

কোন মন্তব্য নেই

Blogger দ্বারা পরিচালিত.