বেশি ভিটামিন খেলে শরীরে কী ধরনের সমস্যা দেখা দেয়?
ভিটামিন আমাদের শরীরের জন্য খুবই দরকারি। ভিটামিনের অভাবে আমাদের শরীরে বিভিন্ন রকম রোগ হয়। আর এই জন্য আমরা বিভিন্ন ধরনের ভিটামিন যুক্ত খাবার বা সাপ্লিমেন্ট গ্রহণ করে থাকি। তবে আমরা অনেকেই জানি না যে, ভিটামিনের অভাবে যেমন শরীরে রোগ হতে পারে ঠিক তেমনি শরীরে ভিটামিন বেশি হয়ে গেলেও নানান ধরনের রোগ হতে পারে। এ সমস্যাগুলোকে সাধারণত "Hypervitaminosis" বলা হয়। বিভিন্ন ভিটামিনের অতিরিক্ত মাত্রা শরীরে বিভিন্ন রকমের প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করতে পারে। নিচে কিছু ভিটামিনের অতিরিক্ত মাত্রা থেকে হতে পারে এমন সমস্যা বা রোগের বিষয়ে আলোচনা করা হলো।
ভিটামিন এ:
শরীরে Vitamin A বেশি হয়ে গেলে যে অবস্থা তৈরি হয়,
তাকে
হাইপারভিটামিনোসিস এ (Hypervitaminosis
A) বলা হয়। এটি
একটি বিষাক্ত অবস্থা, যা অতিরিক্ত ভিটামিন এ
গ্রহণের কারণে হতে পারে। শরীরে ভিটামিন এ বেশি হয়ে গেলে যে সব সমস্যা তৈরি হতে
পারে তার লক্ষণগুলো নিম্নরুপ:
ত্বকের
সমস্যা: আমাদের ত্বক শুষ্ক হয়ে যেতে পারে, চুলকানি হতে
পারে, ত্বকে ফাটা বা লালচে হওয়া দাগের সৃষ্টি হতে
পারে।
যকৃতের
সমস্যা: যকৃতের ক্ষতি বা ফাংশনের সমস্যা হতে পারে। যকৃত সঠিক ভাবে কাজ না করতে
পারে এবং পরবর্তীতে যকৃতকে কেন্দ্র করে জটিল কোনও রোগের সৃষ্টি হতে পারে।
অস্থি ও
জয়েন্টে ব্যথা: হাড় ও জয়েন্টের ব্যথা বা হাড় ভেঙে যাওয়ার আশংকা তৈরি হতে পারে।
ভিটামিন এ এর আধিক্য যদি বাড়তে থাকে তবে হাড়ের ব্যাথাও বাড়তে পারে।
মাথাব্যথা ও
চোখের সমস্যা: শরীরে ভিটামিন এ বেড়ে গেলে নিয়মিত মাথাব্যথা হতে পারে এবং আপনি চোখে
ঝাপসা দেখতে পারেন।
বমি বা বমি
বমি ভাব: ভিটামিন এ বেশি হয়ে গেলে শরীরের ভিতরে বীষক্রিয়ার সৃষ্টি হয়। এই জন্য
আপনি পেটে অস্বস্তি ও বমি বমি ভাব কিংবা বমি করতে পারেন।
মস্তিষ্কে
চাপ: বেশি ভিটামিন এ গ্রহণের ফলে ইনট্রাক্রানিয়াল প্রেসার বৃদ্ধি পেতে পারে, যা অনেক সময় মাথাব্যথা ও বমির কারণ হতে পারে।
ভ্রূণের
জন্মগত ত্রুটি: গর্ভবতী নারীদের অতিরিক্ত
ভিটামিন এ গ্রহণের ফলে ভ্রূণের জন্মগত ত্রুটি হতে পারে।
এটি সাধারণত
লিভার বা মাছের তেলের সাপ্লিমেন্ট বেশি গ্রহণ করার ফলে ঘটে থাকে। অতিরিক্ত ভিটামিন
এ গ্রহণ এড়াতে, প্রতিদিনের প্রয়োজনীয়
মাত্রার মধ্যে ভিটামিন এ গ্রহণ করা উচিত।
ভিটামিন ডি:
শরীরে
অতিরিক্ত Vitamin D গ্রহণের ফলে যে অবস্থা তৈরি হয়, তাকে
হাইপারভিটামিনোসিস ডি (Hypervitaminosis
D) বলা হয়। এটি
সাধারণত ভিটামিন ডি সাপ্লিমেন্ট অতিরিক্ত গ্রহণ করার কারণে হয়, কারণ খাদ্য থেকে প্রাপ্ত ভিটামিন ডি বা সূর্যালোকের
মাধ্যমে তৈরি হওয়া ভিটামিন ডি থেকে সাধারণত অতিরিক্ততা ঘটে না। শরীরে ভিটামিন ডি
বেশি হয়ে গেলে যে সব সমস্যা তৈরি হতে পারে তার লক্ষণগুলো নিম্নরুপ:
হাইপারক্যালসেমিয়া
(Hypercalcemia): অতিরিক্ত ভিটামিন ডি
শরীরে ক্যালসিয়ামের মাত্রা অত্যধিক বাড়িয়ে দেয়, যা বমি, বমি বমি ভাব,
দুর্বলতা, এবং ক্ষুধামন্দার কারণ হতে পারে।
পেশী ও অস্থির
সমস্যা: শরীরে ভিটামিন ডি এর পরিমাণ বশি হয়ে গেলে পেশীতে ব্যথা, দুর্বলতা,
এবং অস্থির
জয়েন্টের সমস্যা হতে পারে।
কিডনির ক্ষতি:
বেশি ভিটামিন ডি গ্রহণের ফলে অতিরিক্ত ক্যালসিয়াম কিডনিতে জমা হতে পারে, যা কিডনিতে পাথর তৈরি বা কিডনির কার্যকারিতা কমিয়ে দিতে
পারে।
হাড়ের
দুর্বলতা: শরীরে ভিটামিন ডি এর পরিমাণ বশি হয়ে গেলে ক্যালসিয়ামের অতিরিক্ততার
কারণে হাড়ের ক্ষয় হতে পারে এবং হাড় দুর্বল হয়ে যেতে পারে। ফলে সামান্য কারণে হাড়
ভেঙ্গে যেতে পারে।
হৃদরোগের
ঝুঁকি: বেশি ভিটামিন ডি গ্রহণের ফলে ক্যালসিয়ামের মাত্রা বেড়ে গিয়ে রক্তনালীতে
ক্যালসিয়াম জমা হতে পারে, যা হৃদরোগ বা
রক্তচাপের সমস্যার ঝুঁকি বাড়াতে পারে।
মানসিক
পরিবর্তন: বিভ্রান্তি, মনোযোগের অভাব, এবং মানসিক অস্থিরতার মতো লক্ষণ দেখা দিতে পারে যদি
আপনার শরীরে ভিটামিন ডি এর পরিমাণ বৃদ্ধি পায়।
হাইপারভিটামিনোসিস
ডি সাধারণত তখনই হয় যখন কোনো ব্যক্তি দীর্ঘ সময় ধরে উচ্চ মাত্রার ভিটামিন ডি
সাপ্লিমেন্ট গ্রহণ করে। তাই, চিকিৎসকের পরামর্শ
ছাড়া উচ্চ মাত্রার ভিটামিন ডি সাপ্লিমেন্ট গ্রহণ করা উচিত নয়।
ভিটামিন ই:
শরীরে
অতিরিক্ত Vitamin E গ্রহণের ফলে যে অবস্থা তৈরি হয়, তাকে
হাইপারভিটামিনোসিস ই (Hypervitaminosis
E) বলা হয়। এটি
সাধারণত ভিটামিন ই সাপ্লিমেন্ট অতিরিক্ত গ্রহণের কারণে ঘটে। ভিটামিন ই একটি
ফ্যাট-দ্রবণীয় ভিটামিন, যা শরীরে সঞ্চিত হয়, এবং বেশি পরিমাণে গ্রহণ করলে বিভিন্ন স্বাস্থ্য সমস্যা
হতে পারে। শরীরে ভিটামিন ই বেশি হয়ে গেলে যে সব সমস্যা তৈরি হতে পারে তার
লক্ষণগুলো নিম্নরুপ:
রক্তপাতের
ঝুঁকি বৃদ্ধি: ভিটামিন ই শরীরে রক্ত জমাট বাধতে সাহায্য করে। শরীরে ভিটামিন ই এর
পরিমাণ বেশি হয়ে গেলে রক্ত জমাট বাঁধার প্রক্রিয়া (ক্লটিং) হ্রাস করতে পারে, যার ফলে শরীরে রক্তপাতের ঝুঁকি বেড়ে যায়। এটি বিশেষ
করে যদি কোনো ব্যক্তি রক্ত পাতলা করার ওষুধ গ্রহণ করে, তাহলে বিপজ্জনক হতে পারে।
হেমোরেজিক
স্ট্রোক: অতিরিক্ত ভিটামিন ই মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণের (hemorrhagic stroke) ঝুঁকি বাড়াতে পারে। ফলে সামান্য প্রেসারেই
স্ট্রোকের আশংকা তৈরি হয়।
ক্লান্তি ও
দুর্বলতা: বেশি পরিমাণে ভিটামিন ই গ্রহণের ফলে ক্লান্তি, দুর্বলতা,
এবং মাথাব্যথা
হতে পারে। শরীর দূর্বল এবং কোনও কাজে অমনোযোগিতা দেখা দিতে পারে।
মাথা ঘোরা ও
ঝাপসা দেখা: অতিরিক্ত ভিটামিন ই কখনও কখনও মাথা ঘোরা এবং চোখে ঝাপসা দেখার মতো
সমস্যার সৃষ্টি করতে পারে।
হজমের সমস্যা:
পেটে ব্যথা, বমি, বমি বমি ভাব এবং ডায়রিয়ার মতো হজমের সমস্যাও দেখা দিতে
পারে যদি আপনার শরীরে ভিটামিন ই এর পরিমাণ বৃদ্ধি পেয়ে থাকে।
হাইপারভিটামিনোসিস
ই সাধারণত সাপ্লিমেন্টের মাধ্যমে অতিরিক্ত ভিটামিন ই গ্রহণের কারণে হয়। সাধারণ
খাদ্য থেকে প্রাপ্ত ভিটামিন ই সাধারণত বিষাক্ত মাত্রায় পৌঁছায় না। অতএব, সঠিক মাত্রায় সাপ্লিমেন্ট গ্রহণের জন্য চিকিৎসকের
পরামর্শ নেওয়া গুরুত্বপূর্ণ।
ভিটামিন কে:
Vitamin K সাধারণত একটি নিরাপদ ভিটামিন হিসেবে বিবেচিত হয়, এবং এটি
অতিরিক্ত পরিমাণে গ্রহণের ফলে বিষাক্ত প্রভাব খুব কমই দেখা যায়। তবে, কিছু ক্ষেত্রে অতিরিক্ত ভিটামিন কে গ্রহণের কারণে কিছু
সমস্যা হতে পারে, বিশেষ করে যদি এটি
সাপ্লিমেন্টের মাধ্যমে গ্রহণ করা হয়। শরীরে ভিটামিন কে বেশি হয়ে গেলে যে সব
সমস্যা তৈরি হতে পারে তার লক্ষণগুলো নিম্নরুপ:
রক্ত জমাট
বাঁধা বৃদ্ধি: ভিটামিন কে রক্তের জমাট বাঁধার প্রক্রিয়া নিয়ন্ত্রণ করে। অতিরিক্ত
ভিটামিন কে গ্রহণ করলে রক্ত জমাট বাঁধার ক্ষমতা বৃদ্ধি পেতে পারে, যা রক্তের ক্লট তৈরি করার ঝুঁকি বাড়াতে পারে। এটি বিশেষ
করে তাদের জন্য বিপজ্জনক হতে পারে যারা রক্ত পাতলা করার ওষুধ গ্রহণ করছে।
ওষুধের
কার্যকারিতা পরিবর্তন: ভিটামিন কে-এর উচ্চ মাত্রা রক্ত পাতলা করার ওষুধের (যেমন:
ওয়ারফারিন বা কুমাদিন) কার্যকারিতাকে হ্রাস করতে পারে, যা সঠিক মাত্রার রক্তপাত নিয়ন্ত্রণের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।
এর ফলে ওষুধের প্রভাব কমে যেতে পারে এবং চিকিৎসার কার্যকারিতা কমে যেতে পারে।
অ্যালার্জি
প্রতিক্রিয়া: খুব কম ক্ষেত্রে, অতিরিক্ত ভিটামিন কে
গ্রহণের ফলে অ্যালার্জির প্রতিক্রিয়া দেখা দিতে পারে, যেমন: চুলকানি, ত্বকের র্যাশ, শ্বাসকষ্ট,
এবং মুখ বা
গলায় ফুলে যাওয়া।
শিশুদের জন্য
সমস্যা: শিশুদের ক্ষেত্রে ভিটামিন কে এর উচ্চ মাত্রা হেমোলাইটিক অ্যানিমিয়া
(রক্তের লোহিত কণিকা ভেঙে যাওয়া) এবং হাইপারবিলিরুবিনেমিয়া (বিলিরুবিনের মাত্রা
বেড়ে যাওয়া) সৃষ্টি করতে পারে, যা তাদের স্বাস্থ্যের
জন্য ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে।
ভিটামিন কে
সাধারণত খাবারের মাধ্যমে প্রাকৃতিকভাবে প্রাপ্ত হয়, এবং খাবার
থেকে প্রাপ্ত ভিটামিন কে অধিক মাত্রায় হওয়ার সম্ভাবনা খুব কম। তবে সাপ্লিমেন্ট
গ্রহণের ক্ষেত্রে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া জরুরি, বিশেষ করে যদি
আপনি রক্ত পাতলা করার ওষুধ ব্যবহার করেন।
ভিটামিন সি:
Vitamin C পানিতে দ্রবণীয় একটি ভিটামিন, এবং অতিরিক্ত পরিমাণে
গ্রহণ করলে সাধারণত এটি প্রস্রাবের মাধ্যমে শরীর থেকে বেরিয়ে যায়। তবে, খুব বেশি ভিটামিন সি গ্রহণের ফলে কিছু স্বাস্থ্য সমস্যা
হতে পারে। শরীরে ভিটামিন সি বেশি হয়ে গেলে যে সব সমস্যা তৈরি হতে পারে তার
লক্ষণগুলো নিম্নরুপ:
হজমের সমস্যা:
অতিরিক্ত ভিটামিন সি গ্রহণের ফলে ডায়রিয়া, পেটে ব্যথা, গ্যাস, বমি বমি ভাব, এবং বমি হতে পারে।
কিডনিতে পাথর:
ভিটামিন সি শরীরে অক্সালেট নামক পদার্থে পরিণত হতে পারে, যা কিডনিতে পাথর তৈরি করতে পারে। যারা কিডনি পাথরের
সমস্যায় ভুগছেন বা কিডনি সমস্যায় আক্রান্ত, তাদের জন্য
ভিটামিন সি-এর উচ্চ মাত্রা বিপজ্জনক হতে পারে।
লোহিত
রক্তকণিকার সমস্যা: কিছু ক্ষেত্রে, ভিটামিন সি-এর
অতিরিক্ততা লোহিত রক্তকণিকার ক্ষতির কারণ হতে পারে, বিশেষ করে
যারা গ্লুকোজ-৬-ফসফেট ডিহাইড্রোজিনেজ (G6PD) ঘাটতি রোগে আক্রান্ত।
লোহা শোষণের
সমস্যা: ভিটামিন সি শরীরে লোহা শোষণের ক্ষমতা বাড়ায়। অতিরিক্ত ভিটামিন সি
গ্রহণের ফলে শরীরে লোহার মাত্রা বেড়ে যেতে পারে, যা হেমোক্রোমাটোসিস
(আয়রন ওভারলোড) রোগ সৃষ্টি করতে পারে।
স্কিন র্যাশ
বা অ্যালার্জির প্রতিক্রিয়া: খুব বেশি পরিমাণে ভিটামিন সি গ্রহণ করলে কিছু
মানুষের ত্বকে র্যাশ বা অ্যালার্জির প্রতিক্রিয়া হতে পারে।
সাধারণত, প্রতিদিন ২০০০ মিলিগ্রামের বেশি ভিটামিন সি গ্রহণ করা
নিরাপদ নয়। তাই, ভিটামিন সি
সাপ্লিমেন্ট গ্রহণ করার আগে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া গুরুত্বপূর্ণ।
ভিটামিন বি৬ (পাইরিডক্সিন):
Vitamin B6 (pyridoxine) সাধারণত খাবারের মাধ্যমে প্রাপ্ত একটি গুরুত্বপূর্ণ ভিটামিন, তবে অতিরিক্ত পরিমাণে গ্রহণ করলে বিভিন্ন স্বাস্থ্য সমস্যা
হতে পারে। শরীরে ভিটামিন বি৬ বেশি হয়ে গেলে যে সব সমস্যা তৈরি হতে পারে তার
লক্ষণগুলো নিম্নরুপ:
স্নায়ুর
ক্ষতি (নিউরোপ্যাথি): দীর্ঘ সময় ধরে উচ্চ মাত্রায় ভিটামিন বি৬ গ্রহণ করলে
স্নায়ুর ক্ষতি হতে পারে। এর ফলে হাত ও পায়ে অবশ বা ঝিঁঝিঁ ভাব, জ্বালাপোড়া,
এবং স্নায়ুর
কার্যকারিতা হ্রাস পেতে পারে। এই অবস্থাকে সংবেদী নিউরোপ্যাথি বলা হয় এবং এটি
চলাচলে অসুবিধা সৃষ্টি করতে পারে।
সমন্বয়
ক্ষমতার সমস্যা: অতিরিক্ত ভিটামিন বি৬ গ্রহণের ফলে শরীরের মাংসপেশীর সমন্বয়
ক্ষমতা কমে যেতে পারে, যার কারণে দৈনন্দিন
কাজকর্ম করতে অসুবিধা হয়।
ত্বকের
সমস্যা: ভিটামিন বি৬-এর অতিরিক্ততা ত্বকের উপর প্রভাব ফেলতে পারে, যেমন: ফুসকুড়ি, ত্বকের জ্বালা
বা ফাটা।
হজমের সমস্যা:
অতিরিক্ত ভিটামিন বি৬ গ্রহণ করলে বমি বমি ভাব, পেটে ব্যথা, এবং হজমের অন্যান্য সমস্যার সৃষ্টি হতে পারে।
আলসার বা
গ্যাস্ট্রাইটিস: অতিরিক্ত ভিটামিন বি৬ গ্রহণ করলে পাকস্থলীতে জ্বালাপোড়া বা
আলসারের ঝুঁকি বেড়ে যেতে পারে।
সাধারণত, প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য প্রতিদিনের সর্বোচ্চ নিরাপদ
মাত্রা ১০০ মিলিগ্রাম। এর বেশি ভিটামিন বি৬ সাপ্লিমেন্ট গ্রহণ করলে এই ধরনের
পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার ঝুঁকি থাকতে পারে।
ভিটামিন B3 (নিয়াসিন):
Vitamin B3 (niacin) অতিরিক্ত মাত্রায় গ্রহণ করলে বিভিন্ন পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হতে পারে, বিশেষ করে যদি সাপ্লিমেন্ট বা উচ্চ-ডোজ ওষুধের মাধ্যমে
এটি নেওয়া হয়। অতিরিক্ত নিয়াসিন গ্রহণের কারণে যে সমস্যাগুলো হতে পারে তা
নিম্নরূপ:
নিয়াসিন
ফ্লাশ (Niacin Flush): অতিরিক্ত নিয়াসিন
গ্রহণের ফলে ত্বক লাল হয়ে যেতে পারে,
এবং ত্বকে
জ্বালাপোড়া বা চুলকানি হতে পারে। এটি সাধারণত মুখ, ঘাড়, এবং বুকে দেখা দেয়। নিয়াসিন ফ্লাশ সাধারণত অস্বস্তিকর
হলেও ক্ষতিকারক নয়।
হজমের সমস্যা:
অতিরিক্ত ভিটামিন বি৩ গ্রহণের ফলে পেটে ব্যথা, বমি বমি ভাব, বমি, এবং ডায়রিয়ার মতো
হজমের সমস্যা হতে পারে।
যকৃতের ক্ষতি:
দীর্ঘ সময় ধরে উচ্চ মাত্রার নিয়াসিন গ্রহণ করলে যকৃতের ক্ষতি হতে পারে, যার ফলে লিভার এনজাইমের মাত্রা বেড়ে যেতে পারে এবং
লিভার কার্যকারিতার সমস্যা দেখা দিতে পারে। এই ধরনের সমস্যা গুরুতর হতে পারে এবং
লিভারের কার্যক্ষমতা হ্রাস করতে পারে।
ইনসুলিন
সংবেদনশীলতা কমানো: নিয়াসিনের উচ্চ মাত্রা রক্তে শর্করার মাত্রা বাড়াতে পারে এবং
ইনসুলিনের সংবেদনশীলতা কমিয়ে দিতে পারে, যা ডায়াবেটিস
রোগীদের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে।
লো ব্লাড
প্রেসার: উচ্চ মাত্রার নিয়াসিন গ্রহণ রক্তচাপ কমাতে পারে, যা কিছু মানুষের মধ্যে মাথা ঘোরা বা দুর্বলতার কারণ হতে
পারে।
দৃষ্টিশক্তির
সমস্যা: খুব বেশি নিয়াসিন গ্রহণের ফলে কিছু ক্ষেত্রে চোখের সমস্যার সৃষ্টি হতে
পারে, যেমন: ঝাপসা দেখা এবং মায়োপিয়া
(ক্ষীণদৃষ্টি)।
প্রাপ্তবয়স্কদের
জন্য নিয়াসিনের দৈনিক সর্বোচ্চ নিরাপদ মাত্রা সাধারণত ৩৫ মিলিগ্রাম পর্যন্ত। এর
বেশি ডোজ নেওয়ার ক্ষেত্রে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।
ভিটামিনের
মাত্রা অতিরিক্ত হলে, তা শরীরে দীর্ঘমেয়াদে
গুরুতর স্বাস্থ্য সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে। এজন্য ভিটামিনের পরিমাণ এবং
প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।
কোন মন্তব্য নেই