কলিজা খাওয়ার উপকারিতা ও কলিজার পুষ্টিগুণ
কলিজা যা সাধারণত পশুর লিভার হিসেবে পরিচিত। এটি খাওয়ার অনেক উপকারিতা রয়েছে। এটি একটি পুষ্টিকর খাবার যা বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পুষ্টি উপাদান সরবরাহ করে। নিয়মিত কলিজা খেলে অনেক ধরনের পুষ্টির চাহিদা মেটানো যায়।
কলিজার পুষ্টিগুণ:
কলিজা পুষ্টিগুণে সমৃদ্ধ একটি খাবার।
এতে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ভিটামিন, মিনারেল,
এবং প্রোটিন রয়েছে। নিচে কলিজার পুষ্টিগুণের
বিস্তারিত তালিকা দেওয়া হলো:
ভিটামিন |
পরিমাণ |
মাত্রা |
প্রোটিন |
১০০ গ্রাম |
২০-২৫ গ্রাম |
ভিটামিন এ |
১০০ গ্রাম |
৬,৫০০-১০,০০০ আইইউ |
আয়রন |
১০০ গ্রাম |
৬-৭ মিলিগ্রাম |
ভিটামিন বি১২ |
১০০ গ্রাম |
৭০-৮০
মাইক্রোগ্রাম |
ফোলেট |
১০০ গ্রাম |
২৫০-৩০০
মাইক্রোগ্রাম |
সেলেনিয়াম |
১০০ গ্রাম |
৩৫-৫০
মাইক্রোগ্রাম |
জিংক |
১০০ গ্রাম |
৪-৫
মিলিগ্রাম |
ফ্যাট |
১০০ গ্রাম |
৫-১০ গ্রাম |
কলিজা খাওয়ার উপকারিতা:
কলিজা একটি সহজলভ্য এবং পুষ্টিকর খাবার। যা শরীরের বিভিন্ন কাজের জন্য অত্যন্ত
গুরুত্বপূর্ণ।
উচ্চ প্রোটিনের উৎস:
কলিজা উচ্চ
মানের প্রোটিন সরবরাহ করে, যা পেশী গঠন
এবং পুনরুদ্ধারে সহায়ক। এটি শরীরের জন্য জরুরি অ্যামিনো অ্যাসিডের একটি ভালো উৎস। প্রোটিন শরীরের
শক্তির একটি গুরুত্বপূর্ণ উৎস। কলিজা খেলে শরীরের শক্তি বাড়ে এবং ক্লান্তি কমাতে
সাহায্য করে। প্রোটিন শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে, যা শরীরকে বিভিন্ন রোগ ও সংক্রমণের
বিরুদ্ধে সুরক্ষা প্রদান করে। প্রোটিনযুক্ত খাবার খেলে দীর্ঘ সময় তৃপ্তি অনুভব হয়, যা অতিরিক্ত খাওয়া কমাতে সাহায্য করে
এবং ওজন নিয়ন্ত্রণে সহায়ক। কলিজা শরীরের বিভিন্ন হরমোন উৎপাদনে সহায়ক, যা শারীরবৃত্তীয় প্রক্রিয়া
নিয়ন্ত্রণ করে।
ভিটামিন এ-এর প্রধান উৎস:
ভিটামিন এ
চোখের স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এটি রেটিনার স্বাস্থ্য বজায় রাখতে
সাহায্য করে এবং রাতে দৃষ্টিশক্তি উন্নত করে। কলিজা শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে, বিশেষ করে সংক্রমণের বিরুদ্ধে সুরক্ষা
প্রদান করে। ভিটামিন এ ত্বকের উন্নতি করে এবং এর উজ্জ্বলতা বাড়ায়। এটি ত্বকের
কোষ পুনর্নবীকরণের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। গর্ভবতী মহিলাদের জন্য ভিটামিন এ গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এটি ভ্রূণের সঠিক বিকাশে সহায়ক।
১০০ গ্রাম
কলিজায় ভিটামিন এ-এর পরিমাণ প্রায় ৬,৫০০-১০,০০০ আইইউ
(ইন্টারন্যাশনাল ইউনিট) হতে পারে, যা দৈনিক
প্রয়োজনীয়তার তুলনায় অনেক বেশি। এই পরিমাণ অন্যান্য খাবারের তুলনায় অনেক বেশি, যা কলিজাকে ভিটামিন এ-এর একটি অন্যতম
উৎস্য হিসেবে চিহ্নিত করে। যদিও কলিজা ভিটামিন এ-এর একটি ভালো উৎস, তবে এটি অতিরিক্ত পরিমাণে খেলে শরীরে
ভিটামিন এ-এর আধিক্য হতে পারে, যা বিষাক্ততা
সৃষ্টি করতে পারে। তাই এটি পরিমিত পরিমাণে খাওয়া উচিত, সাধারণত সপ্তাহে ১-২ বার।
আয়রন এর উৎস:
প্রতি ১০০
গ্রাম কলিজায় প্রায় ৬-৭ মিলিগ্রাম আয়রন থাকে, যা দৈনিক প্রয়োজনীয়তার তুলনায় অনেক বেশি। এটি বিশেষ
করে হিমোগ্লোবিনের মাত্রা বাড়াতে সাহায্য করে। কলিজায় উপস্থিত আয়রন হিম
আয়রনের ফর্মে থাকে, যা শরীরে দ্রুত
শোষিত হয়। উদ্ভিজ্জ উৎসের তুলনায় হিম আয়রন বেশি কার্যকরী এবং সহজে শোষিত হয়।
আয়রন রক্তে হিমোগ্লোবিনের উৎপাদনে সহায়ক, যা অ্যানিমিয়া প্রতিরোধে গুরুত্বপূর্ণ। নিয়মিত কলিজা
খাওয়া অ্যানিমিয়া রোধে কার্যকর।
কলিজা শরীরের জন্য প্রয়োজনীয় অক্সিজেন পরিবহনে সহায়ক, যা ক্লান্তি দূর করে এবং শক্তি
বাড়ায়। পর্যাপ্ত আয়রনের অভাব শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে কমাতে পারে।
কলিজা খাওয়ার মাধ্যমে এটি রক্ষা পায়। আয়রনের ঘাটতি মস্তিষ্কের কার্যকারিতায়
নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। কলিজা খাওয়া মস্তিষ্কের স্বাস্থ্য বজায় রাখতে
সহায়ক।
ভিটামিন বি১২ এর উৎস:
১০০ গ্রাম
কলিজায় প্রায় ৭০-৮০ মাইক্রোগ্রাম ভিটামিন বি১২ থাকে, যা দৈনিক প্রয়োজনীয়তার তুলনায় অনেক
বেশি। মানুষের দৈনিক ভিটামিন বি১২ এর চাহিদা ২.৪ মাইক্রোগ্রাম। কলিজা থেকে পাওয়া
ভিটামিন বি১২ সহজেই শরীরে শোষিত হয়, যা শরীরের বিভিন্ন কার্যক্রমে দ্রুত কাজে লাগে।
ফোলেট এর উৎস:
১০০ গ্রাম
কলিজায় প্রায় ২৫০-৩০০ মাইক্রোগ্রাম ফোলেট থাকে, যা দৈনিক প্রয়োজনীয়তার তুলনায় অনেক বেশি। কলিজা থেকে
পাওয়া ফোলেট শরীরের জন্য সহজে শোষিত হয়, যা শরীরের বিভিন্ন প্রয়োজনীয় কার্যক্রমে দ্রুত কাজে
লাগে। গর্ভবতী মহিলাদের জন্য ফোলেট অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এটি ভ্রূণের সঠিক বৃদ্ধি এবং
বিকাশে সহায়ক। এটি নিউরাল টিউব ডিফেক্টের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে।
ফোলেট লোহিত
কণিকার উৎপাদনে সহায়ক এবং অ্যানিমিয়া প্রতিরোধে গুরুত্বপূর্ণ। এটি শরীরে রক্ত
সঞ্চালন উন্নত করে। ফোলেট ডিএনএ তৈরি এবং মেরামতে সাহায্য করে, যা কোষ বিভাজন এবং বৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণে
গুরুত্বপূর্ণ। ফোলেট হোমোসিস্টাইন নামক একটি অ্যামিনো অ্যাসিডের মাত্রা কমাতে
সাহায্য করে, যা হৃদরোগের
ঝুঁকি কমায়।
সেলেনিয়াম এর উৎস:
১০০ গ্রাম
কলিজায় প্রায় ৩৫-৫০ মাইক্রোগ্রাম সেলেনিয়াম থাকে। সেলেনিয়াম শরীরে
অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এনজাইমগুলোর কার্যক্রম উন্নত করে, যা শরীরকে মুক্ত র্যাডিকেল থেকে
রক্ষা করে এবং বিভিন্ন রোগের ঝুঁকি কমায়। সেলেনিয়াম শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা
বাড়াতে সাহায্য করে এবং সংক্রমণের বিরুদ্ধে সুরক্ষা প্রদান করে।
কলিজা থাইরয়েড
হরমোনের উৎপাদনে গুরুত্বপূর্ণ, যা মেটাবলিজম
নিয়ন্ত্রণে সহায়ক। সেলেনিয়াম হৃদরোগের ঝুঁকি কমাতে সহায়ক। এটি রক্তচাপ
নিয়ন্ত্রণে এবং রক্তের চর্বির মাত্রা কমাতে সাহায্য করে। কিছু গবেষণায় দেখা গেছে
যে সেলেনিয়াম ক্যান্সারের কিছু প্রকারের ঝুঁকি কমাতে সহায়ক।
জিঙ্ক এর উৎস:
১০০ গ্রাম
কলিজায় প্রায় ৪-৫ মিলিগ্রাম জিঙ্ক থাকে। জিঙ্ক শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা
বাড়াতে সাহায্য করে এবং সংক্রমণের বিরুদ্ধে সুরক্ষা প্রদান করে। এটি বিভিন্ন
রোগের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে সহায়ক। জিঙ্ক প্রোটিনের সংশ্লেষণে সহায়ক, যা পেশী গঠনে এবং পুনরুদ্ধারে
গুরুত্বপূর্ণ।
কলিজা ত্বকের
স্বাস্থ্যের জন্যও গুরুত্বপূর্ণ। এটি ক্ষত নিরাময়ে এবং ত্বক সংক্রান্ত বিভিন্ন
সমস্যা কমাতে সহায়ক। জিঙ্ক মস্তিষ্কের কার্যক্রমে সহায়ক এবং মানসিক স্বাস্থ্যের
উন্নতিতে ভূমিকা রাখতে পারে। এটি বিষণ্ণতা এবং উদ্বেগের মাত্রা কমাতে সহায়ক।
কলিজা শরীরের বিভিন্ন হরমোনের উৎপাদনে গুরুত্বপূর্ণ, যা শরীরের বিভিন্ন কার্যক্রম নিয়ন্ত্রণ করে।
কম ক্যালোরি এবং কম ফ্যাট:
১০০ গ্রাম কলিজায় সাধারণত ৫-১০ গ্রাম ফ্যাট থাকে। এর
মধ্যে স্যাচুরেটেড ফ্যাটের পরিমাণ তুলনামূলকভাবে কম, যা স্বাস্থ্যকর খাদ্য হিসেবে বিবেচনা করে। কম
ক্যালোরি এবং কম ফ্যাটের কারণে কলিজা ওজন নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করতে পারে।
কলিজা একটি পুষ্টিকর খাদ্য যা কম ক্যালোরি এবং কম ফ্যাটের জন্য উপযোগী। এটি স্বাস্থ্যকর ডায়েটের অংশ হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করা যেতে পারে, বিশেষ করে যারা ওজন নিয়ন্ত্রণ করতে চান বা স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন করতে চান। কলিজা সঠিকভাবে এবং পরিপূর্ণ সিদ্ধ করে রান্না করা উচিত। অতিরিক্ত পরিমাণে কলিজা খাওয়া ঠিক নয়, কারণ এতে ভিটামিন এ-এর পরিমাণ অনেক বেশি থাকে যা শরীরে বেশি পরিমাণে জমা হলে ক্ষতিকর হতে পারে। সপ্তাহে ১-২ বার পরিমিত পরিমাণে খাওয়া নিরাপদ এবং উপকারী।
কোন মন্তব্য নেই