থাইরয়েড কী? থাইরয়েড সমস্যা কাদের এবং কিভাবে হয়
থাইরয়েড সমস্যাগুলো সাধারণত থাইরয়েড গ্রন্থির অস্বাভাবিক কার্যক্রমের কারণে হয়। থাইরয়েড গ্রন্থি হল গলার সামনে অবস্থিত একটি গ্রন্থি, যা থাইরয়েড হরমোন উৎপাদন করে এবং শরীরের মেটাবলিজম নিয়ন্ত্রণ করে। থাইরয়েড ডিজিজের চিকিৎসা নির্ভর করে সমস্যার ধরণ, তার তীব্রতা এবং ব্যক্তির শারীরিক অবস্থা উপর। থাইরয়েড সমস্যার অনেক গুলো প্রকার হতে পারে। আজকে আমরা থাইরয়েড সমস্যা সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করবো।
থাইরয়েড কী?
থাইরয়েড একটি ছোট, প্রজাপতি আকৃতির গ্রন্থি যা আমাদের গলার সামনের অংশে, কণ্ঠনালী বা ট্রাকিয়ার ঠিক নিচে অবস্থিত। এই গ্রন্থি আমাদের শরীরে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ থাইরয়েড হরমোন উৎপাদন করে, যা শরীরের মেটাবলিজম, শক্তি উৎপাদন, এবং অন্যান্য কার্যাবলী নিয়ন্ত্রণ করে।
শরীরে থাইরয়েডের অবস্থান |
থাইরয়েড হরমোন:
থাইরয়েড
গ্রন্থি দুটি প্রধান হরমোন উৎপাদন করে:
১. থাইরক্সিন
(T4): Thyroxine এটি প্রধান
থাইরয়েড হরমোন যা রক্তের মাধ্যমে সমস্ত কোষে পৌঁছে যায়।
২.
ট্রাইয়োডোথাইরোনিন (T3): Triiodothyronine এটি T4 থেকে
পরিবর্তিত হয় এবং শরীরের কার্যাবলীতে সক্রিয় ভূমিকা রাখে।
থাইরয়েড গ্রন্থির কার্যকারিতা:
থাইরয়েড
হরমোন শরীরের মেটাবলিজম নিয়ন্ত্রণ করে, যার মাধ্যমে
শরীর ক্যালোরি পোড়ায় এবং শক্তি তৈরি করে। এটি শরীরের বিভিন্ন অঙ্গের কাজকর্মের
উপরেও প্রভাব ফেলে, যেমন:
• হার্ট রেট নিয়ন্ত্রণ: থাইরয়েড হরমোন
হার্টের কাজকে দ্রুত বা ধীরে করতে পারে এবং এটি হার্ট রেটকে নিয়ন্ত্রণ করার কাজ
করে।
• শরীরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ: মেটাবলিজমের
মাধ্যমে শরীরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে থাইরয়েড সাহায্য করে।
• এনার্জি লেভেল: থাইরয়েড শক্তি উৎপাদনের
মাধ্যমে আমাদের শরীরকে সক্রিয় ও কর্মক্ষম রাখে এবং এটি শরীরের এনার্জি লেভেল
নিয়ন্ত্রণ করে।
থাইরয়েড সমস্যার প্রকারভেদ:
থাইরয়েড
সমস্যার কয়েকটি শ্রেণীবিভাগ করা হয় তবে তার মধ্য হতে থাইরয়েড মূলত দুই প্রকারের।
যথা।
১. হাইপোথাইরয়েডিজম
(Hypothyroidism)
২. হাইপারথাইরয়েডিজম
(Hyperthyroidism)
১. হাইপোথাইরয়েডিজম
(Hypothyroidism):
হাইপোথাইরয়েডিজম
হলো একটি অবস্থা যেখানে থাইরয়েড গ্রন্থি পর্যাপ্ত পরিমাণে থাইরয়েড হরমোন উৎপন্ন
করতে ব্যর্থ হয়। থাইরয়েড গ্রন্থি থেকে উৎপন্ন হরমোনগুলো (যেমন T3 এবং T4) শরীরের বিপাক
ক্রিয়াকে নিয়ন্ত্রণ করে। যখন এই হরমোনের মাত্রা কমে যায়, তখন শরীরের সব ক্রিয়াকলাপ ধীরগতিতে চলতে থাকে।
হাইপোথাইরয়েডিজমের কারণসমূহ:
• আয়োডিনের ঘাটতি: আয়োডিনের অভাব হলে
থাইরয়েড হরমোন তৈরি হতে সমস্যা হয়।
• হাশিমোটো’স
থাইরয়েডাইটিস (Hashimoto's
Thyroiditis): এটি একটি
অটোইমিউন রোগ যেখানে শরীরের ইমিউন সিস্টেম থাইরয়েড গ্রন্থিকে আক্রমণ করে।
• থাইরয়েড গ্রন্থির অপারেশন: থাইরয়েড
গ্রন্থির আংশিক বা সম্পূর্ণ অপসারণের কারণে হরমোন উৎপাদনে ঘাটতি হতে পারে।
• রেডিয়েশন থেরাপি: ঘাড় বা গলার ক্যান্সারের
চিকিৎসায় রেডিয়েশন থেরাপি থাইরয়েড গ্রন্থিকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে।
• ঔষধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া: কিছু ওষুধের
কারণে থাইরয়েড হরমোন উৎপাদনে বাধা সৃষ্টি হতে পারে।
হাইপোথাইরয়েডিজমের লক্ষণসমূহ:
- অতিরিক্ত ক্লান্তি ও অবসন্নতা
- ওজন বৃদ্ধি
- ঠান্ডা সহ্য করতে কষ্ট
- শুষ্ক ত্বক এবং চুল পড়া
- মনোযোগ কমে যাওয়া এবং বিষণ্ণতা
- মাসিকের অনিয়মিতা (নারীদের ক্ষেত্রে)
- হৃৎস্পন্দন ধীরগতিতে চলা
২. হাইপারথাইরয়েডিজম
(Hyperthyroidism):
হাইপারথাইরয়েডিজম
হলো একটি অবস্থা যেখানে থাইরয়েড গ্রন্থি অতিরিক্ত পরিমাণে থাইরয়েড হরমোন (যেমন T3 এবং T4) উৎপন্ন করে। এর ফলে
শরীরের বিপাক ক্রিয়া (metabolism) অতিরিক্ত গতিতে চলতে
থাকে। হাইপারথাইরয়েডিজমের কারণে শরীরের নানা প্রক্রিয়া দ্রুত এবং অস্বাভাবিকভাবে
কাজ করতে শুরু করে।
হাইপারথাইরয়েডিজমের কারণসমূহ:
• গ্রেভস ডিজিজ (Graves' Disease): এটি একটি অটোইমিউন রোগ যেখানে শরীরের ইমিউন
সিস্টেম থাইরয়েড গ্রন্থিকে অতিরিক্ত হরমোন উৎপাদনে প্ররোচিত করে।
• থাইরয়েড নডিউলস (Thyroid Nodules): থাইরয়েড গ্রন্থিতে গুটি বা নডিউলস গঠিত হলে
তা অতিরিক্ত হরমোন উৎপন্ন করতে পারে।
• থাইরয়েডাইটিস (Thyroiditis): থাইরয়েড গ্রন্থির প্রদাহের কারণে হরমোনগুলি
রক্তপ্রবাহে ছেড়ে যায়, যা সাময়িক
হাইপারথাইরয়েডিজম সৃষ্টি করতে পারে।
• আয়োডিনের অতিরিক্ত সেবন: খাবার বা ওষুধের
মাধ্যমে অতিরিক্ত আয়োডিন গ্রহণ করলে থাইরয়েড হরমোন উৎপাদন বেড়ে যেতে পারে।
• থাইরয়েড হরমোনের অতিরিক্ত ডোজ:
হাইপোথাইরয়েডিজমের চিকিৎসায় থাইরয়েড হরমোনের অতিরিক্ত ডোজ গ্রহণের ফলে
হাইপারথাইরয়েডিজম হতে পারে।
হাইপারথাইরয়েডিজমের লক্ষণসমূহ:
- দ্রুত হৃদস্পন্দন বা হার্টবিট
- ওজন কমে যাওয়া (যদিও খাবারের পরিমাণ অপরিবর্তিত থাকতে পারে)
- অতিরিক্ত ঘাম হওয়া
- নার্ভাসনেস বা উদ্বিগ্নতা
- হাতে কম্পন বা ট্রেমর
- ঘুমের সমস্যা (ইনসমনিয়া)
- চোখের সমস্যাগুলি যেমন চোখ ফোলা বা প্রোট্রুশন
থাইরয়েডের অন্যান্য শ্রেণীবিভাগ:
এই দুটি ছাড়াও
থাইরয়েডের আরও কিছু প্রকার বা শ্রেণী বিভাগ রয়েছে। প্রধান দুটি প্রকার ছাড়া অন্য
প্রকার গুলোও গুরুত্বপূর্ণ। নিচে থাইরয়েডের অন্য শ্রেণী বা প্রকার গুলো তুলে ধরা
হলো:
১. গয়েটার (Goiter):
গয়েটার (Goiter) হলো একটি অবস্থা যেখানে থাইরয়েড গ্রন্থি আকারে
বড় হয়ে যায়। সাধারণত, গলার নিচের দিকে
থাইরয়েড গ্রন্থি অবস্থান করে, এবং এটি বড় হলে গলার
সামনের অংশে একটু ফুলে ওঠা দেখা যায়। গয়েটার বিভিন্ন কারণের জন্য হতে পারে এবং
এটি সাধারণত ব্যথাহীন হয়, যদিও এটি কখনও কখনও
শ্বাসকষ্ট বা গিলতে অসুবিধা সৃষ্টি করতে পারে।
গয়েটারের কারণসমূহ:
আয়োডিনের অভাব:
আয়োডিনের
অভাব গয়েটারের অন্যতম প্রধান কারণ। আয়োডিন থাইরয়েড হরমোন উৎপাদনের জন্য
প্রয়োজনীয় একটি উপাদান। আয়োডিনের অভাবে থাইরয়েড গ্রন্থি হরমোন উৎপাদন বাড়ানোর
জন্য আকারে বড় হতে পারে।
গ্রেভস ডিজিজ (Graves' Disease):
এটি একটি
অটোইমিউন রোগ, যেখানে শরীরের ইমিউন
সিস্টেম থাইরয়েড গ্রন্থিকে অতিরিক্ত হরমোন উৎপাদনে প্ররোচিত করে। এর ফলে থাইরয়েড
গ্রন্থি বড় হয়ে যায় এবং গয়েটার তৈরি হয়।
হাশিমোটো’স
থাইরয়েডাইটিস (Hashimoto's
Thyroiditis):
এটি আরেকটি
অটোইমিউন রোগ, যেখানে থাইরয়েড
গ্রন্থি ক্ষতিগ্রস্ত হয় এবং ধীরে ধীরে কাজ কম করতে শুরু করে। শরীরের চাহিদা
মেটানোর জন্য থাইরয়েড গ্রন্থি বড় হতে পারে, যা গয়েটার
তৈরি করতে পারে।
থাইরয়েড নডিউলস (Thyroid Nodules):
থাইরয়েড
গ্রন্থিতে এক বা একাধিক গুটি বা নডিউল তৈরি হলে তা গয়েটারের কারণ হতে পারে। এই
নডিউলগুলি সাধারণত ক্ষতিকারক নয়, তবে কখনও কখনও
ক্যান্সারের কারণ হতে পারে।
হরমোন পরিবর্তন:
গর্ভাবস্থা, রজঃস্রাবের পরিবর্তন বা মেনোপজের সময় হরমোনের পরিবর্তন
গয়েটারের ঝুঁকি বাড়াতে পারে।
গয়েটারের লক্ষণসমূহ:
- গলার সামনের অংশে ফোলাভাব বা স্ফীতি
- গিলতে বা শ্বাস নিতে সমস্যা
- গলার ব্যথা বা অস্বস্তি (কদাচিৎ)
- কণ্ঠস্বরে পরিবর্তন বা ভারী হওয়া
- কাশি (যা সর্দি বা ঠান্ডা ছাড়া হয়)
২.
থাইরয়েডাইটিস (Thyroiditis)
থাইরয়েডাইটিস
(Thyroiditis) হলো একটি অবস্থা
যেখানে থাইরয়েড গ্রন্থির প্রদাহ হয়। থাইরয়েড গ্রন্থি হলো ঘাড়ের সামনের অংশে
অবস্থিত একটি গ্রন্থি, যা হরমোন উৎপন্ন করে
শরীরের বিপাক ক্রিয়াকে নিয়ন্ত্রণ করে। থাইরয়েডাইটিসের বিভিন্ন ধরনের কারণ থাকতে
পারে এবং তা বিভিন্ন উপসর্গ সৃষ্টি করতে পারে।
থাইরয়েডাইটিসের কারণ সমূহ:
অটোইমিউন প্রতিক্রিয়া: শরীরের ইমিউন
সিস্টেম থাইরয়েড গ্রন্থিকে ভুলভাবে আক্রমণ করে।
জেনেটিক কারণ: পরিবারে এই রোগের ইতিহাস
থাকলে ঝুঁকি বৃদ্ধি পায়।
হরমোনাল পরিবর্তন: মহিলাদের মধ্যে বেশি দেখা
যায়, বিশেষত গর্ভাবস্থায় বা মেনোপজের সময়।
ভাইরাসজনিত সংক্রমণ: সাধারণত ভাইরাল ইনফেকশন, যেমন ভাইরাল ফ্লু বা কিছু ধরনের সংক্রামক রোগের ফলে হতে
পারে।
প্রদাহজনিত প্রতিক্রিয়া: ভাইরাস সংক্রমণের
ফলে থাইরয়েড গ্রন্থির প্রদাহ ঘটতে পারে।
গর্ভাবস্থার পর পরিবর্তন: গর্ভাবস্থার সময়
হরমোনের পরিবর্তনের কারণে এই অবস্থাটি তৈরি হতে পারে।
অটোইমিউন প্রতিক্রিয়া: গর্ভাবস্থায় এবং
পরবর্তী সময়ে ইমিউন সিস্টেমের পরিবর্তন।
অটোইমিউন প্রতিক্রিয়া: এই অবস্থাও
হাশিমোটোস থাইরয়েডাইটিসের মতোই হতে পারে, কিন্তু
সাধারণত ব্যথা সৃষ্টি করে না।
জেনেটিক প্রবণতা: পরিবারে থাইরয়েড রোগের
ইতিহাস থাকলে ঝুঁকি বেড়ে যায়।
রেডিয়েশন থেরাপি: ক্যান্সার চিকিৎসায়
ব্যবহৃত রেডিয়েশন থেরাপি থাইরয়েড গ্রন্থির ওপর প্রভাব ফেলতে পারে।
সার্জারি: থাইরয়েড বা ঘাড়ের অন্যান্য অংশে
সার্জারির পর প্রদাহ সৃষ্টি হতে পারে।
থাইরয়েডাইটিসের
লক্ষণসমূহ:
থাইরয়েডাইটিসের
উপসর্গের ধরন এবং তীব্রতা এর প্রকারভেদ অনুযায়ী পরিবর্তিত হয়। সাধারণ উপসর্গগুলো
হলো:
- ঘাড়ে ব্যথা বা অস্বস্তি (বিশেষত ডিকোয়ারভেইন্স থাইরয়েডাইটিসে)
- ক্লান্তি এবং দুর্বলতা
- ওজন বৃদ্ধি বা হ্রাস
- ত্বকের শুষ্কতা
- চুল পড়া
- দ্রুত হৃদস্পন্দন বা হৃৎকম্পন
- ঠান্ডা বা গরম অনুভূতির প্রতি অস্বাভাবিক সংবেদনশীলতা
৩. থাইরয়েড
নডিউলস (Thyroid Nodules):
থাইরয়েড
নডিউলস (Thyroid Nodules) হলো থাইরয়েড
গ্রন্থিতে গঠিত এক বা একাধিক গুটি বা আকারের পরিবর্তন। সাধারণত, এগুলো ক্ষতিকারক নয় এবং অনেক সময় লক্ষণহীন থাকে, তবে কিছু ক্ষেত্রে এগুলি থাইরয়েড সমস্যার সূচনা বা
ক্যান্সারের পূর্বাভাস দিতে পারে।
থাইরয়েড
নডিউলসের কারণসমূহ:
আয়োডিনের অভাব: আয়োডিনের ঘাটতি থাকলে থাইরয়েড গ্রন্থিতে নডিউলস তৈরি হতে পারে।
হরমোনের পরিবর্তন: হরমোনের পরিবর্তন, বিশেষ করে মহিলাদের মধ্যে গর্ভাবস্থা বা মেনোপজের সময় নডিউলসের ঝুঁকি বাড়াতে পারে।
থাইরয়েড গ্রন্থির প্রদাহ: থাইরয়েডাইটিসের কারণে গ্রন্থির স্থানে প্রদাহ বা ক্ষতির ফলে নডিউল তৈরি হতে পারে।
ক্যালসিয়াম বা থাইরয়েড গ্রন্থির গঠনের অস্বাভাবিকতা: কিছু ক্ষেত্রে, অস্বাভাবিক কোষ বৃদ্ধি বা ক্যালসিয়ামের জমে যাওয়ার কারণে নডিউলস গঠন হতে পারে।
ক্যান্সার: যদিও বেশিরভাগ নডিউলস অসংক্রামক, কিছু ক্ষেত্রে এটি থাইরয়েড ক্যান্সারের নির্দেশক হতে পারে।
থাইরয়েড
নডিউলসের লক্ষণসমূহ:
থাইরয়েড নডিউলস
সাধারণত লক্ষণহীন থাকে, তবে কিছু ক্ষেত্রে
নিচের লক্ষণ দেখা দিতে পারে:
- গলার সামনের অংশে ফোলাভাব বা নডিউল
- গলা ব্যথা বা অস্বস্তি
- গিলতে বা শ্বাস নিতে সমস্যা (যদি নডিউল বড় হয়)
- কণ্ঠস্বরে পরিবর্তন
৪. থাইরয়েড ক্যান্সার:
থাইরয়েড
ক্যান্সার (Thyroid Cancer) হলো থাইরয়েড গ্রন্থির
কোষগুলির অস্বাভাবিক বৃদ্ধি, যা ক্যান্সারে পরিণত
হয়। এটি সাধারণত ধীরে ধীরে বৃদ্ধি পায় এবং অন্যান্য ক্যান্সারের তুলনায়
অপেক্ষাকৃত কম আক্রমণাত্মক। থাইরয়েড ক্যান্সার বিভিন্ন ধরনের হয় এবং কিছু প্রকারের
ক্যান্সার অন্যান্য প্রকারের তুলনায় বেশি সাধারণ।
থাইরয়েড
ক্যান্সারের কারণসমূহ:
জিনগত কারণ: যদি পরিবারের সদস্যদের মধ্যে
থাইরয়েড ক্যান্সার বা অটোইমিউন রোগ থাকে, তবে এর ঝুঁকি
বাড়তে পারে।
আয়োডিনের ঘাটতি: কিছু গবেষণায় দেখা গেছে
যে আয়োডিনের অভাব থাইরয়েড ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়াতে পারে।
থাইরয়েড সমস্যার ইতিহাস: পূর্ববর্তী
থাইরয়েড সমস্যার (যেমন থাইরয়েডাইটিস) ইতিহাস থাকা ব্যক্তিদের মধ্যে ক্যান্সারের
ঝুঁকি বাড়তে পারে।
রেডিয়েশন এক্সপোজার: বিশেষ করে মাথা ও গলা
অঞ্চলে রেডিয়েশন থেরাপি গ্রহণ করলে ক্যান্সারের ঝুঁকি বেড়ে যায়।
থাইরয়েড ক্যান্সারের লক্ষণসমূহ:
- গলার সামনের অংশে একটি নডিউল বা গুটি
- গলার ব্যথা বা অস্বস্তি
- গিলতে বা শ্বাস নিতে অসুবিধা
- কণ্ঠস্বরে পরিবর্তন
- অনর্থক ওজন কমে যাওয়া
- লিম্ফ নোডে ফুলে যাওয়া
থাইরয়েড সমস্যা কাদের হয়:
থাইরয়েড
ডিজিজ যে কারো হতে পারে, তবে কিছু নির্দিষ্ট
কারণ ও ঝুঁকি উপাদান রয়েছে, যেগুলো একজন ব্যক্তির
থাইরয়েড ডিজিজে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা বাড়িয়ে দেয়। থাইরয়েড ডিজিজের ঝুঁকি
উপাদানসমূহ নিম্নরুপ:
লিঙ্গ:
মহিলাদের
মধ্যে থাইরয়েড ডিজিজে আক্রান্ত হওয়ার প্রবণতা পুরুষদের তুলনায় অনেক বেশি।
বিশেষত হাইপোথাইরয়েডিজম ও হাইপারথাইরয়েডিজম মহিলাদের মধ্যে বেশি দেখা যায়।
বয়স:
থাইরয়েড
ডিজিজের ঝুঁকি সাধারণত বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বাড়ে। বিশেষত ৫০ বছর বা তার বেশি
বয়সের নারীরা বেশি ঝুঁকিতে থাকে।
পারিবারিক
ইতিহাস:
যদি পরিবারের
কারো থাইরয়েড ডিজিজ থাকে, তবে অন্য সদস্যদেরও এই
রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশংকা বেশি থাকে। বিশেষত গ্রেভস ডিজিজ বা হাশিমোটো’স থাইরয়েডাইটিসের ক্ষেত্রে এই ঝুঁকি বেশি।
অটোইমিউন রোগ:
যাদের অন্য
অটোইমিউন রোগ রয়েছে (যেমন টাইপ ১ ডায়াবেটিস, রিউমাটয়েড
আর্থ্রাইটিস, লুপাস), তাদের থাইরয়েড ডিজিজে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বেশি থাকে।
আয়োডিনের
মাত্রা:
শরীরে
আয়োডিনের অভাব বা অতিরিক্ততা, উভয় অবস্থাই থাইরয়েড
ডিজিজ সৃষ্টি করতে পারে। আয়োডিন থাইরয়েড হরমোন উৎপাদনের জন্য প্রয়োজনীয়, তাই এর ভারসাম্যহীনতা থাইরয়েড সমস্যা তৈরি করতে পারে।
গর্ভাবস্থা ও
প্রসবকালীন সময়:
গর্ভবতী নারী
এবং প্রসবের পরের সময়ে মহিলাদের মধ্যে থাইরয়েড ডিজিজ দেখা দিতে পারে। এটি সাধারণত
প্রসব-পরবর্তী থাইরয়েডাইটিস (postpartum
thyroiditis) নামে পরিচিত।
সঠিক
খাদ্যাভ্যাস ও জীবনধারা:
অতিরিক্ত
স্ট্রেস, অনিয়ন্ত্রিত খাদ্যাভ্যাস, এবং অপর্যাপ্ত ঘুম থাইরয়েড গ্রন্থির কার্যকারিতায়
প্রভাব ফেলতে পারে এবং ডিজিজের ঝুঁকি বাড়াতে পারে।
বিগত থাইরয়েড
সমস্যা বা চিকিৎসা:
অতীতে যদি কেউ
থাইরয়েড গ্রন্থির কোনো সমস্যা বা অস্ত্রোপচার করিয়ে থাকেন, তবে তাদের আবারও থাইরয়েড ডিজিজ হওয়ার সম্ভাবনা বেশি
থাকে।
থাইরয়েড ডিজিজের ঝুঁকি কারো মধ্যে বেশি থাকলে তাকে নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা করানো এবং লক্ষণ দেখা দিলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।
কোন মন্তব্য নেই