টাইপ ২ ডায়াবেটিস কী? কারণ, লক্ষণ এবং প্রাথমিক চিকিৎসা
টাইপ ২ ডায়াবেটিস হলো একটি দীর্ঘমেয়াদী রোগ, যা শরীরে ইনসুলিনের কার্যকারিতা কমে যাওয়ার ফলে রক্তে শর্করার মাত্রা বেড়ে যায়। টাইপ ২ ডায়াবেটিস সাধারণত ধীরে ধীরে গড়ে ওঠে এবং এর সাথে জীবনযাপন এবং খাদ্যাভ্যাসের সম্পর্ক রয়েছে। বর্তমানে এই ধরনের ডায়াবেটিস বিশ্বব্যাপী খুবই পরিচিত। আধুনিক পৃথিবীতে কোটি কোটি মানুষ এই রোগে আক্রান্ত হয়ে জীবন যাপন করছে। এটি একটি বংশগত রোগ কিন্তু এটি কোনও সংক্রামক রোগ নয়। আজকের আলোচনায় আমরা টাইপ ২ ডায়াবেটিস সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করবো।
টাইপ ২ ডায়াবেটিস কী?
টাইপ ২ ডায়াবেটিস (Type 2 Diabetes) হলো ডায়াবেটিসের একটি সাধারণ ধরন যেখানে শরীরের কোষগুলো ইনসুলিন ঠিকমতো ব্যবহার করতে পারে না বা অপ্রতুল ইনসুলিন তৈরি করে। এর ফলে রক্তে শর্করার বা গ্লুকোজের মাত্রা বেড়ে যায়। টাইপ ২ ডায়াবেটিস সাধারণত ধীরে ধীরে বিকাশ ঘটে এবং প্রাথমিক পর্যায়ে কোনো লক্ষণ দেখা নাও যেতে পারে। এটি যখন পরিপূর্ণ ভাবে শরীরকে আক্রান্ত করে তখন শরীরে বিভিন্ন রকমের লক্ষণ বা উপসর্গ দেখা দেয়। এই জাতীয় ডায়াবেটিস সাধারণত বয়স্কদের হয়, তবে কিশোর ও যুবকরাও এই রোগে আক্রান্ত হতে পারেন।
বর্তমানে
বিশ্বব্যাপী প্রায় ৮.২ বিলিয়ন
লোক আছে, তার মধ্যে প্রায় ৬.৫% মানুষ
ডায়াবেটিসে আক্রান্ত। এটি বিশ্বব্যাপী মানুষের মৃত্যুর নবম প্রধান কারণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। প্রতি বছর ১ মিলিয়নেরও বেশি
মানুষ ডায়াবেটিসের কারণে মারা যায়। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং পশ্চিম ইউরোপের মতো উন্নত দেশগুলিতে টাইপ ২ ডায়াবেটিসের কেস
সবচেয়ে দ্রুত বাড়ছে।
বিজ্ঞানীরা
বলছেন টাইপ ২ ডায়াবেটিস পুরুষ
এবং মহিলাদের প্রায় একই হারে প্রভাবিত করে। বয়স হিসেবে এই রোগে আক্রান্ত
হওয়ার তালিকা নিচে দেয়া হলো:
- ১৫-৪৯ বছর বয়সীদের মধ্যে ৪.৪%
- ৫০-৬৯ বছর বয়সীদের মধ্যে ১৫%
- ৭০ বা তার বেশি বয়সীদের মধ্যে ২২%
টাইপ ২ ডায়াবেটিস এর কারণ:
টাইপ
২ ডায়াবেটিস মূলত দেহের ইনসুলিন ব্যবহারে অক্ষমতা বা ইনসুলিন প্রতিরোধের
কারণে হয়। এর ফলে দেহের
কোষগুলো ইনসুলিন ঠিকমত ব্যবহার করতে পারে না, যা রক্তে শর্করার
পরিমাণ বৃদ্ধি করে। টাইপ ২ ডায়াবেটিসের প্রধান
কারণগুলো নিম্নে আলোচনা করা হলো।
অতিরিক্ত ওজন:
টাইপ
২ ডায়াবেটিসের অন্যতম প্রধান কারণ হল অতিরিক্ত ওজন
বা স্থূলতা। যখন শরীরে চর্বির পরিমাণ বেশি হয়, বিশেষ করে পেটের অংশে (অভ্যন্তরীণ চর্বি বা ভিসেরাল ফ্যাট),
তখন শরীরের কোষগুলো ইনসুলিনের প্রতি প্রতিরোধী হয়ে যায়। এই অবস্থাকে ইনসুলিন
প্রতিরোধ বলা হয়। ফলে, শরীরে ইনসুলিন উৎপাদিত হলেও, তা ঠিকমতো কাজ
করতে পারে না, যার ফলে রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা বেড়ে যায়। উচ্চ রক্তচাপ, উচ্চ কোলেস্টেরল, এবং অতিরিক্ত ওজন একসঙ্গে টাইপ ২ ডায়াবেটিসের ঝুঁকি
বাড়ায়।
অস্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস:
অস্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস টাইপ ২ ডায়াবেটিসের ঝুঁকি বাড়ানোর অন্যতম প্রধান কারণ। উচ্চ ক্যালোরিযুক্ত, প্রক্রিয়াজাত, এবং চিনি-সমৃদ্ধ খাবারগুলো দীর্ঘমেয়াদে রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা বাড়ায়, যা ইনসুলিন প্রতিরোধের সৃষ্টি করে এবং টাইপ ২ ডায়াবেটিসের ঝুঁকি বৃদ্ধি করে। সফট ড্রিঙ্ক, এনার্জি ড্রিঙ্ক এবং অন্যান্য মিষ্টি পানীয় রক্তে শর্করার মাত্রা দ্রুত বাড়ায়, যা ইনসুলিনের চাহিদা বাড়িয়ে দেয় এবং ইনসুলিন প্রতিরোধের ঝুঁকি বাড়ায়। এছাড়াও, সময়মতো না খাওয়া, অতিরিক্ত খাওয়া, এবং খাবারে পর্যাপ্ত পুষ্টির ঘাটতি টাইপ ২ ডায়াবেটিসের ঝুঁকি বাড়ায়।
শারীরিক পরিশ্রমের অভাব:
টাইপ
২ ডায়াবেটিসের অন্যতম কারণ শারীরিক পরিশ্রমের অভাব। নিয়মিত শারীরিক পরিশ্রম না করলে শরীরের
কোষগুলো ধীরে ধীরে ইনসুলিনের প্রতি কম সংবেদনশীল হয়ে
যায়, যার ফলে রক্তে শর্করার মাত্রা বেড়ে যায় এবং টাইপ ২ ডায়াবেটিসের ঝুঁকি
বৃদ্ধি পায়। শারীরিক পরিশ্রম না করার ফলে
শরীরে চর্বি জমে যা ওজন বাড়ায়,
বিশেষত পেটে। অতিরিক্ত ওজন ইনসুলিন প্রতিরোধের ঝুঁকি বাড়িয়ে টাইপ ২ ডায়াবেটিসের কারণ
হতে পারে। নিয়মিত শারীরিক পরিশ্রম করলে মেটাবলিজম সক্রিয় থাকে। পরিশ্রমের অভাবে মেটাবলিজমের গতি কমে যায়, যার ফলে শরীরে অতিরিক্ত ক্যালোরি জমা হয় এবং ওজন বাড়ে। যেটি টাইপ ২ ডায়াবেটিসের ঝুঁকি
বাড়িয়ে দেয়।
পারিবারিক ইতিহাস:
টাইপ
২ ডায়াবেটিসের ঝুঁকি পারিবারিক ইতিহাস বা বংশগত কারণের
ওপর অনেকটাই নির্ভরশীল। যদি পরিবারের কারো টাইপ ২ ডায়াবেটিস থাকে,
তাহলে তার সন্তান বা পরিবারের অন্য
সদস্যদের মধ্যেও এই রোগের ঝুঁকি
অনেক বেশি থাকে। পরিবারের কারো টাইপ ২ ডায়াবেটিস থাকলে
সন্তানদের মধ্যে ইনসুলিন প্রতিরোধের ঝুঁকি বৃদ্ধি পায়। এটি শরীরে গ্লুকোজ নিয়ন্ত্রণে সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে। পারিবারিক ইতিহাসের কারণে শরীরে মেটাবলিজম বা বিপাকক্রিয়া প্রভাবিত
হতে পারে। এটি টাইপ ২ ডায়াবেটিসের ঝুঁকি
বাড়ায়।
বয়স:
বয়স
বাড়ার সাথে সাথে টাইপ ২ ডায়াবেটিসের ঝুঁকি
বৃদ্ধি পায়। সাধারণত ৪৫ বছর বা
তার বেশি বয়সে এই ঝুঁকি বেশি
দেখা যায়, যদিও সাম্প্রতিক সময়ে তরুণদের মধ্যেও এই রোগ বাড়ছে।
বয়স বাড়ার সাথে সাথে শরীরের কোষগুলো ইনসুলিনের প্রতি কম সংবেদনশীল হয়ে
পড়ে, ফলে ইনসুলিন প্রতিরোধ বৃদ্ধি পায় এবং রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে সমস্যা হয়। বয়সের সাথে পেশী কমতে থাকে, যা শরীরে গ্লুকোজ
ব্যবহার কমিয়ে দেয়। এতে ইনসুলিনের কার্যকারিতা কমে এবং রক্তে শর্করার মাত্রা বেড়ে যেতে পারে। অনেক সময় বয়স বাড়ার সাথে শরীরে অতিরিক্ত চর্বি জমতে থাকে, বিশেষ করে পেটের অংশে। এই চর্বি ইনসুলিন
প্রতিরোধ বাড়িয়ে টাইপ ২ ডায়াবেটিসের ঝুঁকি
বৃদ্ধি করতে পারে।
উচ্চ রক্তচাপ:
উচ্চ
রক্তচাপ এবং টাইপ ২ ডায়াবেটিসের মধ্যে
একটি শক্তিশালী সম্পর্ক রয়েছে। উচ্চ রক্তচাপ শরীরে ইনসুলিন প্রতিরোধের ঝুঁকি বাড়ায় এবং একে নিয়ন্ত্রণ না করলে টাইপ
২ ডায়াবেটিসের সম্ভাবনা বেড়ে যায়। এই দুই অবস্থাই
পরস্পরকে প্রভাবিত করতে পারে এবং একসাথে উপস্থিত হলে স্বাস্থ্য ঝুঁকি অনেক বাড়িয়ে দেয়। উচ্চ রক্তচাপের কারণে রক্তনালীগুলো এবং কোষে ইনসুলিনের কার্যকারিতা কমে যায়, ফলে রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা বেড়ে যায়। উচ্চ রক্তচাপ রক্তনালীতে ক্ষতি করে, যার ফলে রক্তের প্রবাহ বাধাগ্রস্ত হয় এবং এটি গ্লুকোজ নিয়ন্ত্রণের সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে।
মানসিক চাপ:
মানসিক
চাপ বা স্ট্রেস টাইপ
২ ডায়াবেটিসের ঝুঁকি বৃদ্ধিতে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। দীর্ঘস্থায়ী মানসিক চাপ শরীরে বিভিন্ন হরমোন নিঃসরণের পরিবর্তন ঘটায়, যা ইনসুলিন প্রতিরোধ
বাড়ায় এবং রক্তে শর্করার মাত্রা বাড়ায়। মানসিক চাপের সময় শরীরে করটিসল ও অ্যাড্রেনালিন হরমোনের
নিঃসরণ বেড়ে যায়, যা রক্তে গ্লুকোজের
মাত্রা বাড়ায়। দীর্ঘদিন ধরে এই অবস্থায় থাকলে
ইনসুলিন প্রতিরোধের ঝুঁকি বেড়ে যায়। যেটি শরীরে টাইপ ২ ডায়াবেটিসের জন্য
দায়ী।
ঘুমের অভাব:
ঘুমের
অভাব টাইপ ২ ডায়াবেটিসের ঝুঁকি
বাড়ানোর একটি অন্যতম কারণ। পর্যাপ্ত ও গুণগত ঘুম
না হলে শরীরের বিভিন্ন কার্যক্রমে অসামঞ্জস্য দেখা দেয়, যার ফলে রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে সমস্যা হতে পারে এবং ইনসুলিন প্রতিরোধ বেড়ে যায়। ঘুমের অভাবে গ্রেলিন ও লেপটিন হরমোনের
ভারসাম্য বিঘ্নিত হয়, যা ক্ষুধা বাড়ায়
এবং অতিরিক্ত চিনি ও কার্বোহাইড্রেট সমৃদ্ধ
খাবারের প্রতি আকর্ষণ বাড়ায়। এই খাবারগুলো রক্তে
শর্করার মাত্রা দ্রুত বাড়ায় এবং টাইপ ২ ডায়াবেটিসের ঝুঁকি
বাড়ায়।
টাইপ ২ ডায়াবেটিসের লক্ষণ:
টাইপ
২ ডায়াবেটিসের লক্ষণগুলো ধীরে ধীরে দেখা দেয়। প্রাথমিক পর্যায়ে লক্ষণগুলো খুব স্পষ্ট নাও হতে পারে, তবে ধীরে ধীরে এগুলো প্রকট আকার ধারন করে। টাইপ ২ ডায়াবেটিসের লক্ষণগুলো
নিচে তুলে ধরা হলো:
অতিরিক্ত
তৃষ্ণা ও মুখ শুষ্ক
হওয়া: শরীরে বেশি শর্করা জমা হওয়ার ফলে অতিরিক্ত তৃষ্ণা লাগে ও মুখ শুষ্ক
হয়ে যায়।
বারবার
প্রস্রাবের প্রয়োজন: টাইপ ২ ডায়াবেটিস হওয়ার
পর বারবার প্রসাব লাগে। মূলত শরীর থেকে অতিরিক্ত শর্করা বের করার প্রক্রিয়া হিসেবে বারবার প্রসাব লাগে।
অতিরিক্ত
ক্ষুধা: টাইপ ২ ডায়াবেটিসে আক্রান্ত
হলে অতিরিক্ত ক্ষুধা লাগে। ক্ষুধা এতোটাই প্রকট হয় যে দীর্ঘক্ষণ
না খেয়ে থাকলে মাথা ঘুরে আসে। মূলত শরীরের
কোষগুলো যথেষ্ট শক্তি না পাওয়ায় এমনটা
ঘটে।
দেহের
ওজন কমে যাওয়া: এই ধরনের ডায়াবেটিসের
কারণে শরীর পর্যাপ্ত ইনসুলিন ব্যবহার করতে পারে না, ফলে ওজন কমতে শুরু করে।
অল্প
কাজে ক্লান্তি অনুভব করা: ডায়াবেটিস হয়ে রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণ না থাকায় শরীরের
শক্তি দিনের পর দিন কমতে
থাকে।
দৃষ্টিশক্তি
ঝাপসা হয়ে আসা: টাইপ ২ ডায়াবেটিস হওয়ার
পর উচ্চ শর্করা চোখের রক্তনালীতে প্রভাব ফেলে, ফলে দৃষ্টিশক্তি ঝাপসা হতে পারে।
ক্ষত
শুকাতে দেরি হওয়া: ডায়াবেটিস হওয়ার পর উচ্চ শর্করা
রক্তনালীগুলোর কার্যকারিতা কমিয়ে দেয়, ফলে ক্ষত শুকাতে বেশি সময় লাগে।
বারবার
সংক্রমণ হওয়া: টাইপ ২ ডায়াবেটিসের কারণে
রোগীদের ত্বক, মূত্রনালি ও মুখে সহজে
সংক্রমণ হয়ে থাকে। এর কারণে নারীরা
বারবার ইস্ট ইনফেকশনেও আক্রান্ত হতে পারে।
হাত-পা অবশ বা
জ্বালাপোড়া: ডায়াবেটিস হওয়ার পর উচ্চ শর্করা
নার্ভের ক্ষতি করে, যা পা ও
হাতের আঙুলে অবশ ভাব বা জ্বালাপোড়া সৃষ্টি
করতে পারে।
টাইপ
২ ডায়াবেটিসে অনেকেই এসব লক্ষণকে প্রাথমিকভাবে গুরুত্ব দেন না। তাই, কোনো লক্ষণ দেখা দিলে দ্রুত স্বাস্থ্য পরীক্ষা করানো জরুরি।
টাইপ ২ ডায়াবেটিসের পর্যায় সমূহ:
টাইপ
২ ডায়াবেটিসকে সাধারণত চারটি পর্যায়ে ভাগ করা হয়, কারণ এটি ধীরে ধীরে বৃদ্ধি পায় এবং বিভিন্ন পর্যায়ে লক্ষণগুলি আরও স্পষ্ট হতে থাকে। প্রতিটি পর্যায়ে ডায়াবেটিসের জটিলতাও বৃদ্ধি পেতে থাকে।
১. ডায়াবেটিস পূর্ব পর্যায়:
• এই পর্যায়ে রক্তে
শর্করার পরিমাণ স্বাভাবিকের তুলনায় কিছুটা বেশি থাকে, তবে এটি ডায়াবেটিসের সীমার মধ্যে ধরা হয় না।
• ইনসুলিন প্রতিরোধ গড়ে উঠতে শুরু করে, এবং অনিয়ন্ত্রিত জীবনধারা বজায় রাখলে এটি টাইপ ২ ডায়াবেটিসে রূপান্তরিত
হতে পারে।
• এই পর্যায়ে থাকা
অবস্থায় জীবনধারা পরিবর্তন করে ডায়াবেটিসকে নিয়ন্ত্রণ করা যায়।
২. প্রাথমিক ডায়াবেটিস পর্যায়:
• এ পর্যায়ে দেহে
পর্যাপ্ত ইনসুলিন উৎপন্ন হলেও তা সঠিকভাবে কাজ
করে না, অর্থাৎ ইনসুলিন প্রতিরোধ বেড়ে যায়।
• রক্তে শর্করার মাত্রা বাড়তে থাকে এবং কিছু সাধারণ লক্ষণ দেখা দিতে পারে, যেমন অতিরিক্ত তৃষ্ণা, ঘন ঘন প্রস্রাব
ইত্যাদি।
• খাদ্যাভ্যাস নিয়ন্ত্রণ, ব্যায়াম এবং জীবনধারা পরিবর্তন করলে এই পর্যায়েও রক্তে
শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণ সম্ভব।
৩. মূল ডায়াবেটিস পর্যায়:
• এ পর্যায়ে ইনসুলিন
প্রতিরোধ আরও বেড়ে যায়, এবং দেহ পর্যাপ্ত ইনসুলিন উৎপন্ন করতে পারে না।
• রক্তে উচ্চ শর্করার কারণে দেহের বিভিন্ন অঙ্গপ্রত্যঙ্গের ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়তে শুরু করে। যেমন, চোখ, কিডনি, এবং স্নায়ুর ক্ষতি হতে পারে।
• এই পর্যায়ে রক্তে
শর্করা নিয়ন্ত্রণে ওষুধ প্রয়োজন হতে পারে।
৪. জটিলতাপূর্ণ ডায়াবেটিস পর্যায়:
• এই পর্যায়ে রক্তে
শর্করার মাত্রা অত্যন্ত অনিয়ন্ত্রিত হয়ে পড়ে এবং ইনসুলিনের অভাব তীব্র হয়।
• বিভিন্ন ধরনের জটিলতা যেমন, হৃদরোগ, কিডনির ক্ষতি, নার্ভের সমস্যা, চোখের সমস্যা এবং পায়ের আলসার দেখা দিতে পারে।
• এই পর্যায়ে ইনসুলিন
বা ইনজেকশন সহ আরও শক্তিশালী
ওষুধ প্রয়োজন হয় এবং জীবনধারা কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণে রাখা দরকার হয়ে পড়ে।
টাইপ ২ ডায়াবেটিসের চিকিৎসা:
টাইপ
২ ডায়াবেটিসের চিকিৎসায় সাধারণত জীবনধারার পরিবর্তন, খাদ্যাভ্যাস, ওষুধ এবং নিয়মিত চিকিৎসা পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে করা হয়। এখানে কিছু প্রাথমিক চিকিৎসা এবং ব্যবস্থার কথা উল্লেখ করা হলো:
স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস:
বাজারে
সুস্থ খাবার বেছে নেওয়া: শর্করার পরিমাণ কম এবং ফাইবার
সমৃদ্ধ খাবার যেমন শাক-সবজি, পূর্ণ শস্য, এবং বাদাম খাওয়া।
কম
চিনি ও স্যাচুরেটেড ফ্যাট:
অতি প্রক্রিয়াজাত খাবার, সফট ড্রিংকস, এবং বেশি চর্বিযুক্ত খাবার এড়িয়ে চলা।
নিয়মিত
পুষ্টিকর খাবার: ছোট ছোট খাবার গ্রহণ করে রক্তে শর্করার স্তর স্থিতিশীল রাখা।
শারীরিক সক্রিয়তা:
নিয়মিত
ব্যায়াম: সপ্তাহে কমপক্ষে ১৫০ মিনিটের শারীরিক কার্যকলাপ, যেমন হাঁটা, সাইকেল চালানো, বা সাঁতার কাটা।
শক্তি
প্রশিক্ষণ: পেশী তৈরি ও বজায় রাখার
জন্য সপ্তাহে অন্তত দুই দিন শক্তি প্রশিক্ষণ করা।
ওজন নিয়ন্ত্রণ:
ওজন
কমানো: যদি আপনি স্থূলতা বা অতিরিক্ত ওজনের
শিকার হন, তবে ওজন কমানোর মাধ্যমে ইনসুলিনের কার্যকারিতা বাড়ানো উচিত।
সঠিক
ওজনের টার্গেট সেট করা: স্বাস্থ্যের জন্য উপযুক্ত ওজন নির্ধারণ করা এবং তা অর্জনের জন্য
পরিকল্পনা করা।
মানসিক স্বাস্থ্য এবং চাপ নিয়ন্ত্রণ:
স্ট্রেস
ম্যানেজমেন্ট: যোগব্যায়াম, মেডিটেশন বা গভীর শ্বাস-প্রশ্বাসের মাধ্যমে মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণ করা।
ঘুমের
মান উন্নত করা: পর্যাপ্ত ও গুণগত মানের
ঘুম নেওয়া, কারণ ঘুমের অভাব রক্তে শর্করার মাত্রা বাড়িয়ে দিতে পারে।
নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা:
রক্তের
শর্করার মাত্রা নিয়মিত পরীক্ষা করা: চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী রক্তে শর্করা পরীক্ষা করা।
চিকিৎসক
দ্বারা নিয়মিত স্বাস্থ্য পর্যালোচনা: রক্তচাপ, কোলেস্টেরল, এবং অন্যান্য স্বাস্থ্য সূচকগুলোর উপর নজর রাখা।
ওষুধ গ্রহণ:
ডায়াবেটিসের
জন্য প্রেসক্রিপশন ওষুধ: যদি জীবনধারার পরিবর্তনগুলি পর্যাপ্ত না হয়, তবে
চিকিৎসক ওষুধের পরামর্শ দিতে পারেন।
ইনসুলিন
থেরাপি: কিছু ক্ষেত্রে ইনসুলিন নেওয়ার প্রয়োজন হতে পারে।
এই
পদক্ষেপগুলো গ্রহণ করলে টাইপ ২ ডায়াবেটিসের ঝুঁকি
কমানো এবং রোগের উন্নতি সাধনে সহায়ক হতে পারে।
কোন মন্তব্য নেই