Header Ads

গর্ভধারণ বা প্রেগন্যান্সির প্রাথমিক ১০টি লক্ষণ সমূহ !

গর্ভাবস্থা প্রতিটি নারীর একটি সাধারণ প্রক্রিয়া। গর্ভবতী নারীরা প্রাকৃতিক ভাবে সন্তান প্রসব করে থাকে। গর্ভাবস্থাকে সাধারণত এক সপ্তাহ থেকে চল্লিশ সপ্তাহে বিভক্ত করা হয়। একজন নারী যখন গর্ভবতী হয় তখন সে প্রাথমিক অবস্থায় কিছু লক্ষণ দেখতে পায়। এই লক্ষণ গুলোকে Early Pregnancy Symptoms বলা হয়। আপনি গর্ভবতী কিনা সেটা এই লক্ষণ গুলো পর্যালোচনার মাধ্যমে আপনি নিশ্চিত হতে পারবেন। আজকের আলোচনায় আমরা জানবো গর্ভাবস্থার প্রাথমিক ১০টি লক্ষণ সম্পর্কে।

গর্ভধারণ করার প্রাথমিক ১০টি লক্ষণ সমূহ:

একজন নারী গর্ভবতী হলে তিনি প্রাথমিক অবস্থায় কিছু লক্ষণ অনুভব করেন। এই লক্ষণগুলি পর্যালোচনা করলে সহজেই বোঝা যায় তিনি গর্ভবতী হয়েছেন নাকি হননি। নিম্নে গর্ভধারণ করার প্রাথমিক ১০টি লক্ষণ সমূহ আলোচনা করা হলো।

. পিরিয়ড বন্ধ হওয়া:

গর্ভবস্থার একটি প্রধান লক্ষণ হলো পিরিয়ড বন্ধ হয়ে যাওয়া (missed period) যখন গর্ভধারণ ঘটে, তখন হরমোনের পরিবর্তনের কারণে মাসিক চক্র বন্ধ হয়ে যায়। এটি গর্ভাবস্থার প্রাথমিক এবং গুরুত্বপূর্ণ একটি সংকেত। গর্ভধারণের পর শরীরে হরমোনের স্তর যেমন, প্রোজেস্টেরন এবং হিউম্যান করোনিক গনাডোট্রোপিন বেড়ে যায়, যা মাসিক চক্রকে প্রভাবিত করে। যখন ভ্রূণ গর্ভে বৃদ্ধি পেতে থাকে, তখন শরীর মাসিকের জন্য প্রস্তুতি নেয় না এবং ফলস্বরূপ মাসিক বন্ধ হয়ে যায়। মাসিক বন্ধ হওয়া গর্ভাবস্থার অন্যতম স্পষ্ট লক্ষণ। তাই যদি মাসিক বন্ধ হয়ে যায় এবং অন্য গর্ভাবস্থার লক্ষণ দেখা দেয়, তাহলে দ্রুত গর্ভাবস্থার পরীক্ষা করা উচিত।

. পেট ফোলা ভাব:

গর্ভাবস্থার সময় পেট ফোলা (abdominal bloating) একটি সাধারণ লক্ষণ। এটি গর্ভাবস্থার প্রথম ত্রৈয়মাসিকের মধ্যে ঘটে এবং হরমোনের পরিবর্তনের কারণে শরীরে বিভিন্ন শারীরবৃত্তীয় পরিবর্তনের ফলস্বরূপ ঘটে। গর্ভধারণের পর প্রোজেস্টেরন হরমোনের মাত্রা বৃদ্ধি পায়। এটি অন্ত্রের পেশীগুলিকে শিথিল করে, যা খাবারের হজমকে ধীর করে এবং গ্যাস উৎপাদন বাড়ায়। গর্ভাবস্থায় খাবারের শোষণ এবং হজম প্রক্রিয়ায় পরিবর্তনের কারণে শরীরে অতিরিক্ত গ্যাস উৎপন্ন হয়, যা পেট ফোলার কারণ হতে পারে। এঅবস্থায় নারীদের খাদ্যাভাস পরিবর্তিত হতে পারে, যার ফলে কিছু খাবার বা পানীয় পেট ফোলার কারণ হতে পারে। গর্ভাবস্থায় পেটের আকার বৃদ্ধি পায় এবং পেটের মধ্যে চাপ অনুভব হয়, যা ব্লোটিংয়ের অনুভূতি সৃষ্টি করে।

. স্তনের আকার পরিবর্তন:

গর্ভাবস্থার সময় স্তনের আকার পরিবর্তন (breast changes) একটি সাধারণ লক্ষণ। গর্ভধারণের ফলে স্তনে হরমোনের পরিবর্তন এবং অন্যান্য শারীরবৃত্তীয় পরিবর্তন ঘটে, যা স্তনের আকার, আকৃতি সংবেদনশীলতায় প্রভাব ফেলে। গর্ভাবস্থায় শরীরে প্রোজেস্টেরন এবং ইস্ট্রোজেনের মাত্রা বৃদ্ধি পায়। এই হরমোনগুলি স্তন গ্রন্থিগুলির বৃদ্ধি এবং বিকাশে সহায়ক হয়। গর্ভাবস্থায় স্তনের টিস্যুর বৃদ্ধি ঘটে, যা স্তনের আকার এবং আকৃতির পরিবর্তন ঘটায়। এটি সাধারণত গর্ভধারণের প্রথম তিন মাসের মধ্যে ঘটে। স্তনে স্নায়বিকতা বা সংবেদনশীলতা বাড়তে পারে, যার ফলে স্তনবৃন্ত এবং আশেপাশের অঞ্চলেও পরিবর্তন দেখা যায়। কিছু মহিলার স্তন আগে থেকে বড় বা ভারী হওয়ার পরিবর্তে সাধারণত পাতলা হতে পারে। স্তনের ত্বক স্তনবৃন্তের রঙ পরিবর্তন হতে পারে, যা গর্ভাবস্থার সঙ্গে যুক্ত একটি স্বাভাবিক পরিবর্তন।

. অতিরিক্ত ক্লান্তি:

গর্ভাবস্থার সময় অতিরিক্ত ক্লান্তি (fatigue) একটি সাধারণ এবং প্রকৃত লক্ষণ। অনেক নারী গর্ভধারণের প্রথম তিন মাসে এবং কখনও কখনও গর্ভাবস্থার শেষের দিকে অতিরিক্ত ক্লান্তি অনুভব করেন। গর্ভাবস্থায় প্রোজেস্টেরন এবং অন্যান্য হরমোনের মাত্রা বৃদ্ধি পায়, যা ক্লান্তি এবং ঘুমের অনুভূতি বাড়াতে পারে। গর্ভাবস্থায় শরীরের অনেক পরিবর্তন ঘটে, যেমন পেটের আকার বৃদ্ধি, যা শরীরের জন্য অতিরিক্ত শক্তি ব্যয় করে এবং ক্লান্তি অনুভব করতে পারে। গর্ভাবস্থায় রক্তের ভলিউম এবং হিমোগ্লোবিনের মাত্রা বৃদ্ধি পায়, যা শরীরকে নতুন জীবন তৈরি করতে সাহায্য করে, কিন্তু এটি ক্লান্তির কারণও হতে পারে। শরীরের প্রয়োজনীয় পুষ্টি যেমন আয়রন, ফোলিক অ্যাসিড এবং ভিটামিন D-এর অভাব ক্লান্তির অনুভূতি সৃষ্টি করতে পারে।

. মর্নিং সিকনেস:

মর্নিং সিকনেস (morning sickness) গর্ভাবস্থার একটি পরিচিত লক্ষণ, যা সাধারণত গর্ভধারণের প্রথম প্রথম তিন মাস চলাকালীন ঘটে। যদিও এর নাম "মর্নিং" সিকনেস, তবে এটি দিনব্যাপী যে কোনো সময় হতে পারে। গর্ভাবস্থায় হরমোনের মাত্রা, বিশেষ করে হিউম্যান করোনিক গনাডোট্রোপিন (hCG) এবং প্রোজেস্টেরন বৃদ্ধি পায়। এই হরমোনের উচ্চ মাত্রা কিছু মহিলার মধ্যে বমি বমির ভাব সৃষ্টি করতে পারে। গর্ভাবস্থার কারণে শরীরের মেটাবলিজমে পরিবর্তন ঘটে, যা হজম ব্যবস্থাকে প্রভাবিত করে এবং মর্নিং সিকনেসের কারণ হতে পারে। গর্ভাবস্থায় অনেক নারী সুগন্ধ খাবারের গন্ধের প্রতি অতিরিক্ত সংবেদনশীল হয়ে যান, যা তাদের বমি ভাব সৃষ্টি করে।

. পেশীর ব্যথা:

গর্ভাবস্থার সময় পেশীর ব্যথা (muscle pain) একটি সাধারণ লক্ষণ যা অনেক গর্ভবতী নারীর ক্ষেত্রে দেখা যায়। এই ব্যথাগুলো শরীরের বিভিন্ন অংশে হতে পারে, বিশেষ করে পেট, পিঠ এবং পা অঞ্চলে। গর্ভাবস্থায় শরীরের আকার এবং ওজন পরিবর্তিত হয়, যা পেশীগুলিতে চাপ সৃষ্টি করে। বিশেষ করে পেটের বৃদ্ধি এবং ভ্রুণের অবস্থান পরিবর্তন পেশীর উপর চাপ সৃষ্টি করে। গর্ভাবস্থার সময় হরমোনের মাত্রা বাড়ে, বিশেষ করে রিল্যাক্সিন (relaxin) এই হরমোন পেশীগুলোকে শিথিল করে, যা পেশীর ব্যথার কারণ হতে পারে। গর্ভাবস্থায় নারীরা সাধারণত দৈনন্দিন কাজের চাপের কারণে পেশীতে অতিরিক্ত চাপ অনুভব করেন। দীর্ঘ সময় ধরে দাঁড়িয়ে থাকা বা বসে থাকা, কিংবা ভারী কিছু উত্তোলন করাও সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে।

. মেজাজের পরিবর্তন:

গর্ভাবস্থায় মেজাজের পরিবর্তন (mood swings) একটি খুবই সাধারণ লক্ষণ। অনেক গর্ভবতী নারী গর্ভধারণের সময় বিভিন্ন মানসিক এবং আবেগগত পরিবর্তনের মুখোমুখি হন। এই পরিবর্তনগুলি কখনও কখনও দ্রুত ঘটে এবং দৈনন্দিন জীবনে প্রভাব ফেলতে পারে। গর্ভাবস্থায় শরীরে হরমোনের যেমন, প্রোজেস্টেরন এবং ইস্ট্রোজেন মাত্রা দ্রুত পরিবর্তিত হয়। এই হরমোনের পরিবর্তন মেজাজের উপর গভীর প্রভাব ফেলে। গর্ভাবস্থায় নারীর শরীরের আকার এবং কার্যক্রমে পরিবর্তন ঘটে, যা নারীর মানসিক অবস্থাকে প্রভাবিত করতে পারে। গর্ভাবস্থার সময় নারীকে নতুন দায়িত্ব এবং পরিবর্তনের চাপ নিতে হয়, যা নারীর মাঝে উদ্বেগ এবং মানসিক চাপ সৃষ্টি করে। এছাড়াও নারীদের মর্নিং সিকনেস, ক্লান্তি, এবং অন্যান্য শারীরিক অসুস্থতা মেজাজে নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।

. বারবার প্রস্রাব হওয়া:

গর্ভাবস্থায় বারবার প্রস্রাব হওয়া (frequent urination) একটি খুবই সাধারণ লক্ষণ। এটি গর্ভধারণের প্রথম ট্রাইমেস্টার থেকে শুরু করে গর্ভাবস্থার শেষ অবধি চলতে পারে। গর্ভাবস্থায় হরমোনের মাত্রা বৃদ্ধি পায়, বিশেষ করে হিউম্যান করোনিক গনাডোট্রোপিন (hCG) এই হরমোন মূত্রনালী এবং পেশীতে পরিবর্তন ঘটায়, যা প্রস্রাবের প্রবাহ বৃদ্ধি করে। গর্ভাবস্থায় বাচ্চার বৃদ্ধি এবং পেটের আকার পরিবর্তনের ফলে মূত্রাশয়ের উপর চাপ পড়ে। এতে প্রস্রাবের পরিমাণ বাড়ে এবং মূত্রাশয় দ্রুত পূর্ণ হয়। গর্ভাবস্থায় রক্তের পরিমাণ বৃদ্ধি পায়, যা কিডনির কাজের উপর চাপ সৃষ্টি করে এবং মূত্রের উৎপাদন বাড়ায়। কিছু নারী গর্ভাবস্থায় পর্যাপ্ত পানি পান করার চেষ্টা করেন, যা প্রস্রাবের পরিমাণ বাড়াতে সাহায্য করে, ফলে গর্ভবতী নারী বারবার প্রসাবের চাপ অনুভব করেন।

. ফুড ক্রেভিং বা অ্যান্টিপ্যাথি:

গর্ভাবস্থায় ফুড ক্রেভিং (food cravings) এবং অ্যান্টিপ্যাথি (food aversions) একটি সাধারণ এবং স্বাভাবিক লক্ষণ। অনেক গর্ভবতী নারী বিশেষ কিছু খাবারের প্রতি আকৃষ্ট হন, আবার কিছু খাবার বা গন্ধের প্রতি অস্বস্তি বা ঘৃণা অনুভব করেন। গর্ভাবস্থায় শরীরে হরমোনের পরিবর্তন ঘটে, বিশেষ করে ইস্ট্রোজেন এবং প্রোজেস্টেরনের মাত্রা বৃদ্ধি পায়। এই হরমোনগুলি খাদ্যাভ্যাসকে প্রভাবিত করে এবং কিছু খাবারের প্রতি আকর্ষণ সৃষ্টি করে। গর্ভাবস্থায় শরীরের পুষ্টির প্রয়োজন বেড়ে যায়। ফলে কিছু বিশেষ খাবারের প্রতি আকৃষ্ট হওয়ার প্রবণতা দেখা দিতে পারে। গর্ভাবস্থায় নারীদের মানসিক চাপ এবং উদ্বেগ বৃদ্ধি পেতে পারে, যা খাদ্যাভ্যাসকে প্রভাবিত করে। গর্ভাবস্থায় স্বাদ গন্ধের প্রতি সংবেদনশীলতা বৃদ্ধি পায়, ফলে কিছু খাবারের প্রতি আকৃষ্ট হওয়া বা অস্বস্তি অনুভব করা সাধারণ।

১০. মাথাব্যথা:

গর্ভাবস্থায় মাথাব্যথা (headache) একটি সাধারণ লক্ষণ, যা অনেক গর্ভবতী নারীর মধ্যে দেখা যায়। এটি গর্ভাবস্থার বিভিন্ন পর্যায়ে ঘটতে পারে এবং এর কারণগুলি বিভিন্ন হতে পারে। গর্ভাবস্থায় হরমোনের মাত্রা দ্রুত পরিবর্তিত হয়, বিশেষ করে প্রোজেস্টেরন এবং ইস্ট্রোজেন। এই পরিবর্তনগুলি মাথাব্যথার কারণ হতে পারে। গর্ভাবস্থায় শরীরে অনেক শারীরিক পরিবর্তন ঘটে, যা মাথাব্যথার সৃষ্টি করতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, রক্তের পরিমাণ বৃদ্ধি এবং রক্তচাপের পরিবর্তন। এই অবস্থার সময় মানসিক চাপ, উদ্বেগ, এবং চাপের অনুভূতি মাথাব্যথার কারণ হতে পারে। দীর্ঘসময় এক অবস্থায় থাকার ফলে ঘাড় এবং পিঠের পেশীগুলিতে চাপ পড়তে পারে, গর্ভাবস্তার সময় যা মাথাব্যথার সৃষ্টি করে। গর্ভাবস্তার প্রাথমিক সময়ে শরীরের প্রয়োজনীয় পুষ্টি, যেমন আয়রন বা ভিটামিন D-এর অভাবও মাথাব্যথা সৃষ্টি করতে পারে।

এই সকল লক্ষণগুলো যদি নারীদের মধ্যে দেখা যায় তবে hCG হরমোন পরীক্ষার মাধ্যমে গর্ভাবস্তা নিশ্চিত হতে হয়।

কোন মন্তব্য নেই

Blogger দ্বারা পরিচালিত.