Header Ads

মায়ের দুধ ছাড়া কেন শিশু কিছু খেতে চায় না?

শিশুদের খাদ্য পানীয় হিসেবে প্রথম ছয় মাস মায়ের বুকের দুধের বিকল্প নেই। প্রথম ছয় মাস অবশ্যই শিশুকে মায়ের দুধ খাওয়াতে হয়। ছয় মাস পার হওয়ার পর শিশুদের মায়ের দুধের পাশাপাশি অন্য স্বাভাবিক খাবার দিতে হয়। মায়েরা ছয় মাস পর যখন শিশুকে বুকের দুধের পাশাপাশি বাইরের অন্য খাবার দিতে শুরু করে তখন প্রায়ই একটি সমস্যা দেখা যায়, আর সেটি হচ্ছে শিশুরা মায়ের দুধ ছাড়া অন্য কিছু খেতে চায় না। এই সমস্যাটি খুবই সাধারণ। আজকে আমরা আলোচনা করবো কেন শিশুরা মায়ের দুধ ছাড়া অন্য কিছু খেতে চায় না।

প্রাকৃতিক পছন্দ:

শিশুরা জন্মগতভাবে মায়ের দুধ খেতে বেশি পছন্দ করে কারণ এটি তাদের শারীরিক মানসিক উন্নয়নের জন্য সবচেয়ে উপযোগী খাবার। প্রাকৃতিক নির্বাচনের মাধ্যমে মানবজাতির বিবর্তনের ধারায় এমন ব্যবস্থা গড়ে উঠেছে, যা নিশ্চিত করে যে মায়ের দুধ নবজাতকের পুষ্টি, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা এবং বৃদ্ধির জন্য সর্বোত্তম। শিশু দীর্ঘ দিন মায়ের বুকের দুধ খেতে অব্যস্ত থাকায় হঠাৎ তার খাবারের পরিবর্তন মেনে নিতে পারে না। আর তাই শিশুদের বুকের দুধের পাশাপাশি অন্য খাবার দিলেও সে মায়ের দুধকেই বেশি পছন্দ করে।

স্বাদ গন্ধের অভ্যস্ততা:

শিশুরা দীর্ঘ দিন ধরে মায়ের দুধ পান করার ফলে মায়ের দুধের স্বাদ গন্ধের প্রতি অভ্যস্ত হয়ে যায়, এবং এটি তাদের জন্য আরামদায়ক পরিচিত অনুভূতি তৈরি করে। এটি একটি স্বাভাবিক প্রক্রিয়া যা তাদের বেঁচে থাকার এবং বেড়ে ওঠার জন্য গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠে। শিশুদের ছয় মাস পর যখন বুকের দুধের পাশাপাশি বাইরের খাবার দেয়া হয় তখন সে বাইরের খাবারের স্বাদ গন্ধ অপরিচিত হওয়ায় বাইরের খাবার খেতে স্বাচ্ছন্দবোধ করে না। বাইরের খাবারের অপরিচিত স্বাদ গন্ধ শিশুকে বাধ্য করে মায়ের দুধ খাওয়ার ব্যাপারে।

বয়সজনিত প্রস্তুতি:

ছয় মাসের নিচে শিশুদের পরিপাকতন্ত্র শক্ত খাবার হজমের জন্য সম্পূর্ণ প্রস্তুত থাকে না। ফলে তারা শুধু তরল বা মায়ের দুধের মতো সহজপাচ্য কিছু পছন্দ করে। ছয় মাস পর যখন বাইরের খাবার দেয়া হয় তখন শিশুদের পরিপাকতন্ত্র শক্ত খাবার হজমের জন্য প্রস্তুতি নিতে থাকে। এই সময়ে শিশুদের বাইরের খাবার দিলে তাদের অভ্যাস জনিত কারণে তারা সহজপাচ্য খাবার খেতে বেশি উৎসাহ প্রকাশ করে। তাই মায়েরা বাইরের খাবার দিলেও শিশুরা সেটি খেতে চাই না, এবং তারা সেই খাবারের চেয়ে মায়ের বুকের দুধ খেতে বেশি পছন্দ করে।

স্বাদে মিষ্টতার প্রভাব:

মায়ের দুধ প্রাকৃতিকভাবে মিষ্টি স্বাদের, যা নবজাতকের জন্য অত্যন্ত আকর্ষণীয়। এটি তাদের স্বাদগ্রাহীর জন্য একটি ইতিবাচক অভিজ্ঞতা তৈরি করে। দীর্ঘ ছয় মাস পর শিশুকে যখন বাইরের খাবার দেয়া হয় তখন সে স্বাদে ভিন্নতার কারণে বাইরের খাবার খেতে উৎসাহী হয় না। 

অন্য খাবারে অনাগ্রহ:

প্রথমদিকে শিশুদের স্বাদগ্রাহক খুবই সংবেদনশীল হয়। যেহেতু তারা শুধুমাত্র মায়ের দুধের স্বাদ জানে, অন্য খাবারের স্বাদ তাদের কাছে অচেনা এই জন্য শিশুদের ছয় মাস পর বাইরের খাবার দিলে তারা তা খেতে চাই না, এবং তারা মায়ের দুধই খেতে চায়। ছয় মাস পর্যন্ত শিশুরা শুধুমাত্র মিষ্টি স্বাদে সীমাবদ্ধ থাকে। ছয় মাস পর শিশুদের যখন বাইরের খাবার দেয়া শুরু করা হয় তখন তাদের সব ধরনের স্বাদের খাবারের সাথে পরিচিত করাতে হয়, যাতে শিশুরা দ্রুত বাইরের খাবারের সাথে অভ্যস্ত হতে পারে। শিশুরা সব ধরনের স্বাদের সাথে পরিচিত হতে শুরু করলে তারা খুব দ্রুতই মায়ের দুধ খাওয়ার অভ্যাস ত্যাগ করতে পারে।

দাঁত ওঠার সমস্যা:

দাঁত ওঠার সময় অনেক শিশুর মুখে ব্যথা বা অস্বস্তি হতে পারে, যা তাদের খাবারের প্রতি আগ্রহ কমিয়ে দিতে পারে। দাঁত উঠার সময় শিশুরা অনেক সময় বাইরের খাবারের প্রতি উৎসাহ হারিয়ে ফেলে এবং মায়ের বুকের দুধ খাওয়ার জন্য আগ্রহী হয়ে উঠে। এটি একটি স্বাভাবিক প্রক্রিয়া এবং এটি নিয়ে মায়েদের চিন্তিত হওয়ার কোনও কারণ নেই।

খাবার খেতে না চাইলে করণীয়:

  • শিশুকে ধীরে ধীরে নতুন খাবারের সঙ্গে পরিচিত করুন।
  • খাবারকে আকর্ষণীয় মজাদার করতে চেষ্টা করুন।
  • শিশুকে সব ধরনের স্বাদের সাথে পরিচিত করান।
  • জোর না করে ধৈর্য ধরে খাওয়ানোর চেষ্টা করুন।

যখন শিশু বড় হতে থাকে, তখন ধীরে ধীরে নতুন খাবারের সঙ্গে তাদের পরিচিত করানো হয়। তবে এটি ধৈর্য সঠিক পদ্ধতির মাধ্যমে করতে হয় যাতে শিশু নতুন স্বাদ গন্ধ গ্রহণ করতে শেখে।

কোন মন্তব্য নেই

Blogger দ্বারা পরিচালিত.